ফাইল ছবি
ছোট্ট একটা পোকা, বেশিরভাগ সময় দৃষ্টির আড়ালেই থাকে। সেই ছারপোকার ভয়াবহতা টের পেয়েছে ফ্রান্সের মানুষ। রাজধানী প্যারিসে রীতিমতো ছারপোকা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য শহরেও বেড়ে যায় উপদ্রব। বিশেষ করে অলিম্পিক আসরের আগে। প্রশ্ন ওঠে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দিক নিয়ে।
মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ইনসেক্টোফোবিয়া বা ছারপোকা আক্রমণের ভয়। ছারপোকার উপদ্রবের খবর শিরোনাম হয় স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেকে দেশেই এ নিয়ে দেখা দেয় শঙ্কা।
বাংলাদেশেও বেশ পরিচিত এই ছারপোকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে এ নিয়ে নানা গল্পও প্রচলিত। আকারে খুবই ছোট ও ডিম্বাকৃতির এই প্রাণীটি এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যায়। একসময় ছারপোকাকে শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা হিসেবে দেখা হতো। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ছারপোকার ৯০টির বেশি প্রজাতি রয়েছে। তবে ব্রিটিশ পেস্ট কন্ট্রোল অ্যাসসোসিয়েশন বলছে, এর মধ্যে যেটা সবচেয়ে পরিচিত, সেটি মানুষের বসবাসের উপযোগী পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়েছে।
ছারপোকা কোথায় থাকে?
ছারপোকার ইংরেজি ‘বেডবাগ’। শুনে মনে হতে পারে শুধুমাত্র বিছানাতেই বুঝি এদের অস্তিত্ব। কিন্তু বিছানা-তোশক ছাড়াও জামা-কাপড়, ফার্নিচার, খাটের ফ্রেম, দেয়ালে ঝুলানো ওয়ালপেপার সবখানেই তাদের দেখা মিলতে পারে। সম্প্রতি প্যারিসের ট্রেনে ছারপোকার অস্তিত্ব মিলছে।
মানুষ যেখানে ঘুমায় তার আশেপাশেই ছারপোকার আবাস। দিনের আলোতে ম্যাট্রেস, তোশক, টেবিল, ড্রয়ার, ওয়ালপেপার ও খাটের আশেপাশে লুকিয়ে থাকে। এজন্য তাদের শুধু একটা ক্রেডিট কার্ড ঢুকানোর মতো জায়গা পেলেই হয়।
আরও পড়ুন>> বিষ ছাড়া ইঁদুর তাড়ান
রাতের বেলা ১০০ ফুট পর্যন্ত চলাচল করতে সক্ষম। তবে মানুষের ঘুমস্থলের আট ফুটের মধ্যে থাকতেই পছন্দ করে।
ছারপোকা কামড়ালে কী হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি) বলছে, ছারপোকা সাধারণত কোনো রোগ ছড়ায় না। তবে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টির কারণে বিরক্তিকর মনে হয়। ছারপোকার কামড়ের অনেকের চুলকানি বা জ্বালা পোড়া করে, আবার কেউ কিছু টেরই পায় না। তবে ছারপোকার কামড় চর্মরোগ ডেকে আনতে পারে। এ থেকে মারাত্মক অ্যালার্জির ঘটনা খুবই বিরল।
মোটকথা, ছারপোকা মানুষের জন্য খুব হুমকি নয়। তবে যাদের অ্যালার্জির আছে, কামড় থেকে অতিরিক্ত চুলকানি হয়, তাদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
ছারপোকা কামড়ালে কী করণীয়?
ছারপোকা কামড়ের প্রভাব সপ্তাহ মেয়াদী। নির্দিষ্ট সময় পর কামড়ের দাগও আর দেখা যায় না, চুলকানিও অনুভূত হয় না। তবে কিছু মৌলিক বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি।
ঠান্ডা কিছু বা ভেজা কাপড় কামড়ের জায়গাতে দেয়া;
আক্রান্ত জায়গা পরিষ্কার রাখা, না চুলকানো;
অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা;
প্রতিরোধে সম্ভাব্য জায়গাতে ইনসেক্টিসাইড বা কীটনাশক স্প্রে করা।
ছারপোকা থেকে মুক্তির উপায়
এটা অনেক সময় কঠিন। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে ছারপোকার অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। যেমন, ছারপোকার থাকার সম্ভাব্য জামা-কাপড়, বিছানার চাদর, জায়গা গরম পানিতে ধোয়া। অন্তত ৩০ মিনিট গরম বাতাসে শুকানো। পরে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে তিন থেকে চারদিন ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
নিয়মিত ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা। যদিও পরিচ্ছন্ন জায়গাতেও ছারপোকার অস্তিত্ব থাকে। কিন্তু নিয়মিত পরিষ্কার করলে এর অস্তিত্ব সহজে মিলবে না। ব্যবহৃত ফার্নিচার কিনলে সেটা ঘরে তোলার আগে ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেয়া।
ব্রিটিশ পেস্ট কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নাটালি বুনগে বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘরে ছারপোকা থাকলে সেটা নিয়ে লজ্জ্বিত না হয়ে প্রতিকার করা। নাটালি বুনগে বলছেন, “তারা আমাদের রক্ত খেয়েই বেঁচে থাকে, তারা আমাদের পছন্দ করে”।
এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পোকা-মাকড় নিরোধক কোম্পানিগুলোর সহায়তাও নেয়া যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
আপন দেশ/এসএমএ