ছবি: সংগৃহীত
এয়ার কন্ডিশনারের (এসি) আবিষ্কার বদলে দিয়েছে বিশ্বকে। বলা হয়, এসির জন্যই রোনাল্ড রিগ্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডা পরিবেশে মানুষের কাজের গতি বাড়ে। মূলত প্রিন্টিংয়ের কাজে এসির আবিষ্কার হলেও, এখন মানুষের আরাম-আয়েশে ব্যবহার হচ্ছে এটি। চলমান দাবদাহে বেড়েছে এসির কদর।
গরম কমিয়ে ভবনে শীতলতা ফেরানোর বাজার এখন প্রায় ২২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় এভাবেই গোটা দুনিয়ায় কদর বাড়ছে এসি’র।
মূলত এসির যাত্রা শুরু ১৯০২ সালে। যদিও এর উদ্ভাবনের সঙ্গে মানুষের আরাম আয়েশের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ব্যাকটেরিয়া থেকে খাদ্যদ্রব্যকে সুরক্ষা এবং ছাপাখানার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসি তৈরির ধারণা আসে। আধুনিক এসি তৈরির জনক মার্কিন প্রকৌশলী উইলিস ক্যারিয়ার। তিনিই প্রথম বৈদ্যুতিক এসি আবিষ্কার করেন। যা প্রিন্টিং ব্যবসায় রীতিমতো বিপ্লব ঘটায়।
পরে এ প্রযুক্তি খাদ্য, ইস্পাত, স্থাপত্যসহ অন্যান্য শিল্পে ব্যাপক হারে ব্যবহার শুরু হয়। একসময় কর্মীদের জন্য কারখানার তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এসির ব্যবহার বাড়তে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, এসির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অফিসে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ২৪ শতাংশ বেড়ে যায়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মানুষের উৎপাদনশীলতার সঙ্গে শীতল পরিবেশের একটি সম্পর্ক আছে। সাধারণত ২১-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মানুষের কাজের গতি বাড়ে।
আরও পড়ুন>> ঈদের আগেই ফ্রিজের যত্ন নিন
১৯০৬ সালে থিয়েটারে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কারণ গ্রীষ্মকালের গরমের মধ্যে বদ্ধ থিয়েটারগুলো চালু রাখা অসম্ভব ছিল। তখন বরফ ও বড় পাখা দিয়ে থিয়েটারের ভেতরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
১৯২০-এর দশকে মুভি থিয়েটারে সাধারণ মানুষ প্রথমবারের মতো এসির অভিজ্ঞতা পায়। এরপর থেকেই থিয়েটারের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং টিকিট বিক্রিও বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে হলিউডে গ্রীষ্মকালীন ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের ধারা শুরু হয়।
আবহাওয়া গরম বা স্যাঁতসেঁতে হওয়ায় বিভিন্ন অফিসে কম্পিউটারের অনেক যন্ত্রাংশ ঠিকঠাক কাজ করছিল না। এসির বদৌলতে ইন্টারনেট ভিত্তিক সার্ভার ও ফার্মগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে স্থাপত্য শিল্পেও। এর আগে, কাচ অথবা আকাশচুম্বী অট্টালিকা তৈরির কথা ভাবাই যেতো না।
একটি অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এসি। এর সুবিধার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাকৃত গরম অঞ্চল ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা ২৮ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশে দাঁড়ায়। যা রোনাল্ড রিগ্যানকে ক্ষমতায় বসতে ভূমিকা রাখে। ওই সময়ে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি এসি ব্যবহার হতো আমেরিকায়।
আরও পড়ুন>> এসি-ফ্যান একসঙ্গে চালানো উচিত?
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো দ্রুত এগিয়ে যেতে শুরু করে। চীনের আবাসিক ভবনে এসির ব্যবহার ১০ বছরে বেড়ে যায় দুই-তৃতীয়াংশ।
ভারত, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোয় এসির বাজার ব্যাপক প্রসার পায়। বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ৩০টি বড় শহরের মধ্যে ১১টিই গরম প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। যার ফলে বড় হচ্ছে এসির বাজার।
তবে তিক্ত সত্য হলো ভেতরের পরিবেশ সহনীয় রাখতে গিয়ে বৈরি করে তোলা হচ্ছে বাইরের পরিবেশ। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, এসির ইউনিট থেকে পাম্প করা গরম বাতাসে অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরের রাতের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়।
ভূগর্ভস্থ মেট্রো ট্রেনগুলোকে শীতল রাখতে গিয়ে উত্তপ্ত হচ্ছে প্ল্যাটফর্মগুলো। সেইসঙ্গে জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার বাড়ছে।
আগুন আবিষ্কারের পর শীতের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ তাপ পোহানো বা ফায়ারপ্লেসের ব্যবহার শুরু করে। তবে গরমকে বাগে আনতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে মানবজাতি।
এয়ার কন্ডিশনার ভেতরের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও, বাইরের আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার ধারে কাছে নেই। এলাগাবুলাস নামে এক রোমান সম্রাট শীতকালে পাহাড় ও তার বাগানে ক্রীতদাসদের দিয়ে বরফ স্তুপ করে রাখে। যা গ্রীষ্মকালে বাতাসের শীতল প্রবাহ প্রাসাদের ভেতরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখতো। আরেক মার্কিন উদ্যোক্তা শীতকালে কাঠের গুঁড়ো দিয়ে বরফের টুকরো সংরক্ষণ করে গরমকালে তা ব্যবহার করতো।
আপন দেশ/এসএমএ