ছবি: ইন্টারনেট
ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের ভাইরাস দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) ২০০১ সালে প্রথম শনাক্ত হয়। শ্বাসযন্ত্রকে আক্রান্ত করা এ ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকে সারা বছরই। তবে ঋতু পরিবর্তনের সময় বিশেষ করে শীত ও বসন্তে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে ভাইরাসটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য মতে, এ ভাইরাসও হাঁচি-কাশির মাধ্যমেই ছড়ায়। শ্বাসযন্ত্রেই এটি সবার আগে আক্রমণ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসটি প্রাণঘাতীও।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি চীনে শিশুদের মধ্যে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) নামে সংক্রমণটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে ভারতেও কয়েকজনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। ভাইরাসটি সর্দি-কাশির মতো উপরের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের পাশাপাশি ফুসফুসের গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে। তবে এবারই প্রথম নয়, ২০০ বছর আগেও ভাইরাসটি আক্রমণ চালিয়েছিল।
যেভাবে ছড়ায়-
এইচএমপিভি সাধারণত আক্রান্ত মানুষের হাঁচি বা কাঁশি থেকে ছড়ায়। এ ছাড়া স্পর্শ বা করমর্দনের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
আমেরিকার 'সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল' সিডিসি বলছে, এইচএমপিভি রয়েছে এমন বস্তু বা স্থান স্পর্শ করে কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাঁশির ড্রপলেট লেগে থাকা স্থান, যেমন দরজার হাতল, লিফটের বাটন, চায়ের কাপ ইত্যাদি স্পর্শ করার পর সে হাত চোখে, নাকে বা মুখে ছোঁয়ালে এইচএমপিভি ছড়াতে পারে। অনেকটা কোভিডের মতো। এইচএমপিভির সংক্রমণ সাধারণত শীতের সময় বাড়ে, যখন মানুষ দীর্ঘ সময় ঘরের ভেতর সময় কাটায়।
কারা বেশি আক্রান্ত হন?
শিশু, বৃদ্ধ ছাড়াও একজন মানুষ একাধিকবার এইচএমপিভি আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এর মধ্যে প্রথমবারের সংক্রমণের তীব্রতা বেশি থাকে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর শরীরে এক ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) তৈরি হয়, যার ফলে পরবর্তী সংক্রমণের তীব্রতা তত বেশি হয় না। তবে ক্যান্সার বা এইচআইভির মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখে আক্রান্তদের বেলায় এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।
আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই
বাংলাদেশের একাধিক ভাইরোলজিস্ট জানিয়েছে, এইচএমপিভি নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কিছু নেই। কারণ এটি কোভিডের মতো নতুন কোনো ভাইরাস নয়। ২০০১ সালে প্রথম এ ভাইরাস শনাক্ত হয় এবং বাংলাদেশে ২০১৬ বা ২০১৭ সালের দিকে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। ভারত ও চীনসহ বিভিন্ন দেশে এ ভাইরাসে আগেও মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর অর্থ হলো মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি গড়ে উঠেছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোভিড ফুসফুসের যতটা ক্ষতিগ্রস্ত করে, এইচএমপিভিতে ততটা হয় না। তানা জানিয়েছেন, শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী বা কঠিন কোনো রোগে আক্রান্তদের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র হতে পারে। কেননা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত দুর্বল থাকে। সেক্ষেত্রে সবসময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
প্রতিরোধের ব্যবস্থা
করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেয়া হয়েছিল, একই ধরনের পদক্ষেপে এ ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব, যেমন—
১. বাইরে গেলেই মাস্ক পরা।
২. ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া। হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা।
৩. আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। জন সমাগমস্থল এড়িয়ে চলা।
৪. হাঁচি কাশি দেয়ার সময় মুখ টিস্যু দিয়ে ঢেকে নেয়া এবং ব্যবহৃত টিস্যুটি সাথে সাথে মুখবন্ধ করা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে হাত সাবান পানিতে ধুয়ে ফেলা। যদি টিস্যু না থাকে তাহলে কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি দেয়া ও
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা।
৬. সর্দিকাশি, জ্বর হলেও অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
টিকা নেই, তাই সতর্কতায় জোর
বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এ ভাইরাস প্রতিরোধে কয়েকটি টিকা তৈরি করা হলেও এইচএমপিভি প্রতিরোধ এখনও সে ধরনের কোনো টিকা নেই। তাই সতর্ক থাকার ওপরেই জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসা
এ ভাইরাসের জন্য বর্তমানে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ নেই বা বিশেষ কোনো চিকিৎসা পদ্ধতিও নেই। চিকিৎসকরা সাধারণত লক্ষণ বুঝে (সিম্পটমেটিক ট্রিটমেন্ট) তা উপশমের চেষ্টা করে থাকেন। যেমন—
১. জ্বর হলে তাপমাত্রা কমানোর ওষুধ প্রদান।
২. সর্দি গলাব্যথা বা শ্বাস নিতে সমস্যা হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা বা ওষুধ সরবরাহ এবং
৩. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীকে বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ প্রদান।
কোভিড পরবর্তী বিশ্ব যখন হাঁফ ছেড়ে উঠতে শুরু করেছে, তখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এইচএমপিভি। তবে এ ভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন সাংহাই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং বাংলাদেশের ভাইরোলজিস্টরা।
আপন দেশ/এসএমএস