ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং বৈরী। এক সময় দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সুদৃঢ় সম্পর্ক ছিল। প্রতিবেশী হলেও বৈরীতার কারণে দু’দেশের মানুষের যাতায়াত, সম্পর্ক খুবই সীমিত। ফলে দেশটি নিয়ে বাংলাদেশিদের কৌতূহল বেশ। তবে জানাশোনা তেমন পরিস্কার নয়। বাংলাদেশে মিয়ানমারের ওপর তেমন বইপত্র মেলে না, জানার সুযোগও কম। কাফি কামাল দেশটির প্রাচীন তিনটি রাজধানী বাগান, মান্দালয়, রেঙ্গুন ও পুরোনো উষ্ণকালীন রাজধানী পিন উ লউইনসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ভ্রমণে কেউ দেখেন মুগ্ধ দৃষ্টিতে, ডুবেন ভাবনার অতলে। নেন ভিনদেশি ব্যঞ্জনের স্বাদ, মাতেন শখের কেনাকাটায়। কাফি কামাল কেবল নিজে দেখেন না, দেখান অন্যদেরও। চিত্ররূপময় বর্ণনায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে তার ভ্রমণ লিখন। বাগান, মান্দালয়, পিন উ লউইন, রেঙ্গুনের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক নৈসর্গ চিত্রায়িত হয়েছে “রঙ্গুম রঙ্গিলা”য়।
ইরাবতীর কূল থেকে হাজার মন্দিরের বাগান, মান্দালয় পাহাড়ের চূড়া থেকে পিন উ লউইনের লীলাময় নিসর্গ, রেঙ্গুনের শোয়েডাগন প্যাগোড়া থেকে বাহাদুর শাহ জাফরের কবর; নানা আকর্ষণীয় স্থান পরিদর্শনে পাঠকদেরও করেন ছায়াসঙ্গী। কবিতার উদ্ধৃতি, গল্পগাঁথা ও হাস্যকৌতুকে চারিয়ে দেন ঐতিহ্যের গভীর শেকড়ে। নানা ঘটনা ও তথ্যে পাঠকদের ইতিহাসের বর্ণিল অলিগলিতে ছুটিয়ে নেন। ঘুরিয়ে আনেন এক মায়াময় স্বপ্নাচ্ছন্নতায়।
কাফি কামাল তার লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন বর্ণিল প্রকৃতি ও স্থাপনার সৌন্দর্য, ব্যঞ্জনের স্বাদ, নানা শ্রেণি-পেশা-বর্ণের মানুষের আচার-আচরণ আর চলতি পথের খুঁটিনাটি। বাগানের প্যাগোড়া সংক্রান্ত মিথ, নানাদেশি পর্যটকদের আনাগোনা, মাইনকাবা গ্রামের শ্রমজীবী পরিবার, মান্দালয়ের বুড়ো ডাক্তারের নীরব চাহনি, মান্দালয় হিলের চূঁড়া থেকে অর্ধচন্দ্রাকৃতির কারাগার, মুখে তানাক্কার নকশা আঁকা মেয়ে, পিন উ লউইনের জাতীয় উদ্যান, রেঙ্গুন সন্ধ্যাকালীন বাহারি স্ট্রিট ফুড, সোনালি শোয়েডাগন প্যাগোড়া, বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধিস্থলের নির্জনতা, দেশটির মুসলমান সম্প্রদায়ের নীরব ক্ষরণ, রবীন্দ্র নাথ-শরৎচন্দ্র ও পাবলো নেরুদার স্মৃতিপাঠসহ বার্মিজ যুবকদের পায়ে সিনলুন ক্রীড়াশৈলী; সবকিছু এবং সকলে তার ভ্রমণ বর্ণনায় সমান রঙিন। রঙ্গুম রঙ্গিলার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশটি সম্পর্কে বিস্তর জানতে পারবেন, কৌতূহলী হবেন এ বিশ্বাস রাখা যায়।
বইটি নিয়ে মনিষা পাল নামে এক পাঠক সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন- “ভ্রামণিক কাফি কামালের সঙ্গে কেউ কি পুরাতাত্ত্বিক নগর ও মন্দিরের শহর বাগান ঘুরে আসতে চান? আমার মতো যাদের ‘যাযাবর মন’ তারা নিশ্চয়ই এ বইটা পড়তে গিয়ে অনুভবে ঘুরে আসতে পারবেন পুরাতন বার্মা দেশ, অধুনা মায়ানমার। আমরা অনেকেই পরিযায়ী পাখির মতো ঘুরি। কিন্তু ক’জনই-বা হৃদয়ের চোখ দিয়ে দ্যাখে? কাফি কামাল আমাদের হৃদয়ের চোখে ঘুরিয়ে দেখাতে চান।”
“রেঙ্গুন শহরে ঘুরতে ঘুরতে লেখকের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্মৃতিপটে ভেসে উঠে পূর্বপুরুষদের মুখে শোনা নানারঙিন গল্পের কথা। পাঠক সবচেয়ে মুগ্ধ হবে এ বইয়ে শব্দের ব্যবহার, বাক্যের অপূর্ব গাঁথুনি, ডিটেইল বর্ণনার পাশাপাশি লেখকের রসবোধে। লেখকের ভাষাভঙ্গী চমকপ্রদ, টানটান। বার্মার প্রকৃতি, ইতিহাস, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চালচিত্র, বিভিন্ন স্মৃতি, নানারকম প্রয়োজনীয় পর্যটন তথ্য ও ছবির সমাহারে ‘রঙ্গুম রঙ্গিলা’ সংগ্রহের রাখার মতো একটি বই।”
আরেকজন পাঠক হক দিলশাদ দিয়া তার পাঠ অনুভূতি প্রকাশ করে লিখেছেন, “শৈশব থেকেই বার্মা রেঙ্গুন নিয়ে যে আগ্রহ ছিল তার অনেকটা মিটেছে কাফি কামালের ‘রঙ্গুম রঙ্গিলা’তে। এ বইটার অপেক্ষায় পহর গুনেছি সে ২০১৬ থেকে। লেখকের হেঁটে বেড়ানো প্রত্যেকটা শহরের খুঁটিনাটি পুঙ্খানুপুঙ্কভাবে পাঠক মহলে পৌঁছাতে চেষ্টা করেছেন তথ্যবহুল বর্ণনায়।”
প্রচ্ছদ এঁকেছেন কবি ও শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। বুনন প্রকাশন কর্তৃক প্রকাশিত বইটির মূল্য ৪৫০ টাকা। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘বুনন’ এর ১৩৩ নাম্বার স্টল, চট্টগ্রাম বইমেলায় ‘খড়িমাটি’র ১০৬-১০৭ স্টল, অনলাইনে ‘রকমারি ডটকম’-এ বইটি পাওয়া যাবে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।