ফাইল ছবি
শেষ হল বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা। প্রতিবছরের মতো এবারো দেশে বইমেলা শুরু হয় ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার)। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চলে বইয়ের উৎসব। দুদিন বাড়ানোর পর শনিবার (২ মার্চ) সেই উৎসবের ইতি ঘটলো।
এবারের বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় অন্তত ১৩ কোটি টাকা বেশি বিক্রি হয়েছে এবার। গত বছর মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৪৭ কোটি টাকার বই।
এ বছর বই প্রকাশিত হয়েছে তিন হাজার ৭৫১টি। গত বছর প্রকাশিত হয় তিন হাজার ৭৩০টি বই। ১ মার্চ পর্যন্ত মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ৬০ লাখের কাছাকাছি ছিল। মেলায় এবার মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ৬০০টি বইয়ের।
শনিবার বিকালে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক শাহেদ মমতাজ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এই বইমেলা অন্যত্র নেয়ার বিষয়ে কথা উঠেছে। আমরা কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানে রাখব।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হয়েছে।মূলত, গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশ, নান্দনিক স্টল এবং শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়।
২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাস্তার রচিত কিলো ফ্লাইট প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন <> সময় বাড়লেও খুশি নন প্রকাশকরা!
২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খিকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়।
২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন), নিমফিয়া পাবলিকেশন (২-৪ ইউনিট) এবং বেঙ্গল বুকসকে (১ ইউনিট) শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়।
মেলার শেষ দিন শনিবার ছুটি থাকায় মেলার দ্বার খোলে বেলা ১১টায়। দ্বার খোলার পর থেকেই আলো নিভে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। শেষ মুহূর্তের ভালোলাগা আর আনন্দের নির্যাস নিতে ভোলেননি কেউই। বইপ্রেমীরা কিনে নিয়েছেন বাকির খাতায় জমে থাকা শেষ বইগুলো।
আর দর্শনার্থীরা অন্যান্য দিনের মতোই শেষ দিনেও আড্ডা আর ঘোরাঘুরি করে কাটিয়েছেন সময়। সব মিলিয়েই লেখক-পাঠক-প্রকাশক আর দর্শনার্থীর সরব উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ।
আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি বলেন, সার্বিক দিক হিসাব করলে এবারের মেলা খুব ভালো হয়েছে। এর পরিবেশ আর নান্দনিক আয়োজন মুগ্ধ করেছে সবাইকে। মেলার বেচাকেনাও ছিল বেশ ভালো। তবে পাইরেট ও ন্যাকেড বইয়ের পরিমাণ বেড়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মেলা ঐতিহ্য হারাবে।
সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমদ বলেন, এবার মেলা শুরু থেকেই খুব ভালো হয়েছে। শোনা যাচ্ছে আগামীবার মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে না। তবে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ মিনারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে মেলা জড়িত। এখানে থাকা উচিত।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।