বর্ষা আবেদনময়ী। ছবি: সংগৃহীত
‘গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা/ কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা/ রাশি রাশি ভারা ভারা/ ধান কাটা হলো সারা/ ভরা নদী ক্ষুরধারা/ খরপরশা/ কাটিতে কাটিতে ধান এলো বর্ষা’। হ্যাঁ, সত্যিই তাই। কবিগুরুর কবিতার মতোই বর্ষা এসে গেছে। তৃষিত হৃদয়ে, পুষ্পে-বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে নতুন প্রাণের নতুন গানের সুর নিয়ে বর্ষা এসেছে ধারায়।
শনিবার (১৫ জুন) বর্ষার প্রথম দিন। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে যখন চৌচির প্রকৃতি, ঠিক সেই সময় স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে আষাঢ়। ভরাবাদলে যেন যৌবন ফিরে পায় প্রকৃতি। গাছ-লতাপাতায় আসে নতুন প্রাণের সঞ্চার, গাছে গাছে শোভিত হয় হাজারো ফুল। প্রকৃতি ধুয়েমুছে হয়ে ওঠে সবুজ। পুরো প্রকৃতি সেজে ওঠে এক অপরূপ সাজে।
বর্ষা যখন আসে তীক্ষ্ন সবুজ বাংলার স্নিগ্ধ প্রতিকৃতি আস্থা আর বিদীর্ণ হতাশার সম্মিলিত উন্মোচনে উড়িয়ে দেয় অশ্রু ভাষা। মহাকবি কালিদাস দুর্গম কৈলাস শেখর নীলগিরিতে বিরহিনী প্রেয়সীর কাছে দূত করে মেঘকে পাঠিয়েছিলেন যক্ষের বার্তা নিয়ে। সেই থেকে বর্ষা যেমন মিলনের নদীতে বিরহের শ্যাওলা জমায়, তেমনি অনুভব করতে শেখায় ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার, পরাণ সখা বন্ধু হে আমার।’
বর্ষা আবেদনময়ী। কবি–সাহিত্যিকদের কাছে তো বটেই। ঘন ঘোর বরিষায় তারে কত কী বলতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ! পাগলা হাওয়ায় বাদল দিনে কবিগুরুর পাগল মন নেচেছে বহুবার। ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে কিছুতেই কোনো কাজে মন না লাগার আক্ষেপও ঝরেছে তার কথায়, লেখায়।
রবীন্দ্রনাথ থেকে হুমায়ূন আহমেদ সকলেই বর্ষা এলে উদাস হন। ঝুম বৃষ্টিতে খোলা রিকশায় চেপে হিমু হয়ে ঘুরে বেড়ানো তো বর্তমান তারুণ্যের ট্রেন্ড হয়ে গেছে। প্রেমিক যুগল বরিষ ধারা মাঝেই খুঁজে নেয় শান্তির বারি। তাদের কাছে বর্ষা মানে সবুজের মাঝে মুক্তির দিশা। বর্ষা মানে প্রকৃতি সৃষ্টি সম্ভবা, ঋতুবতী হয়ে ওঠা; তার মাঝে জন্ম ও জীবনের ঘ্রাণ খুঁজে পাওয়া।
বর্ষা মানে পুরনোকে পিছু ফেলে নতুন আশায় বুক বাঁধা। কবির কাছে বর্ষা তাই রুক্ষ পৃথিবীর বুকে একমাত্র মরুদ্দান; চিত্রিত–শোভিত–রূপময় কাম বিমোহিত, মিলনপিপাসু বিরহ কাতর মন। বর্ষা মানে মানব–মানবীর কামনা সিঞ্চিত বিরহ বিধুর হৃদয় মথিত কাব্য। কিন্তু শহুরে পটে বর্ষা আসে ভিন্ন রূপে; তার সর্বত্র খেলা করে অস্থিরতা। সে শুধু ভিজিয়ে দেয় না, ভাসিয়ে দেয়।
বর্ষায় কবি মন যাত্রা করে চির সৌন্দর্যের অমরাবতীতে। পরিচিত জগৎ-সংসারের বন্ধন তখন তুচ্ছ হয়ে যায়। মনে পড়ে প্রিয় বেদনার কথা। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সে জন্যই হয়তো বলেছেন- ‘এমন দিনে তারে বলা যায়,/এমন ঘনঘোর বরষায়।’ কিংবা, ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।