Apan Desh | আপন দেশ

ফ্যাসিবাদমুক্ত বইমেলা করতে প্রকাশকদের ১৪ দফা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১৮, ২ জানুয়ারি ২০২৫

ফ্যাসিবাদমুক্ত বইমেলা করতে প্রকাশকদের ১৪ দফা

ফাইল ছবি

আগামী মাসে হচ্ছে একুশের চেতনায় শাণিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৫। বিগত বছরের মেলাগুলোর তুলনায় এবারের বইমেলা একটু ব্যতিক্রম। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের সবকিছুর মতো একুশে বইমেলা নিয়েও ভিন্ন চিন্তা করছেন প্রকাশকরা।

মেলায় যাতে ফ্যাসিবাদের দোসর প্রকাশকরা অংশ নিতে না পারে এজন্য সক্রিয় তারা। কোনো প্রকাশক যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় সে বিষয়গুলো নিয়ে বইমেলার আয়োজক বাংলা অ্যাকাডেমিকে ১৪ দফা দাবি জানিয়েছে প্রকাশকদের তিন সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো- বৈষম্য বিরোধী প্রকাশক সমিতি, বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রকাশক সমিতি। 

১৪ দফা দাবি

দাবিগুলো হলো- ১) অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এ ৫০% স্টল ভাড়া কমাতে হবে। মেলায় সকল স্টল একই ধরনের প্যাটার্নে তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। ২) অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ মেলা কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটিতে সমানুপাতিক হারে প্রকাশক প্রতিনিধি রাখা ও মেলায় বিভিন্ন কমিটিতে সাংস্কৃতিক সংগঠন বা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধির সংখ্যা কমাতে হবে। দালাল প্রকাশক ও দালাল লেখকদের এ সমস্ত কমিটিতে রাখা যাবে না। ৩) প্রকাশক বাছাইপর্ব অনুসরণ করে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ প্রকাশকদেরকেই স্টল বরাদ্দ দিতে হবে। স্টল পাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা নির্ণয়ের জন্য রিভিউ কমিটির মাধ্যমে বাছাই করতে হবে। ৪) প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য প্রকাশকদের কাছ থেকে বাংলাদেশে প্রকাশিত বাংলাদেশের লেখক কর্তৃক লিখিত ২০২৪ এ প্রকাশিত ২৫টি নতুন বই জমা দিতে হবে। অথবা ১০০টি মানসম্মত বই জমা দিতে হবে। ৫) প্রাথমিক আবেদনে অবশ্যই ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স, ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট এবং প্রকাশকদের মুদ্রিত ক্যাটালগ জমা দিতে হবে। ৬) অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এ অবশ্যই প্যাভিলিয়ন বন্ধ করতে হবে। ১, ২, ৩ ও ৪ ইউনিটের স্টলগুলো দ্বিমুখি করতে হবে। ৬) কালো তালিকাভুক্ত কোনো প্রকাশককে কোনোভাবেই স্টল বরাদ্দ দেয়া যাবে না। ৮) খাবারের দোকানের সংখ্যা কমিয়ে মানসম্মত ২/৩টি দোকান একেবারে পেছনের দিকে উন্মুক্ত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বরাদ্দ দিতে হবে। খাবারের দোকানে নির্ধারিত মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। ৯) স্পন্সর প্রতিষ্ঠান (যদি বিকাশ থাকে) তাদেরকে সর্বোচ্চ ২টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিতে হবে। ১০) কোনোভাবেই শিশুচত্ত্বর আলাদা করা যাবে না। ১১) চারটি প্যাভিলিয়নের পরিবর্তে বাংলা অ্যাকাডেমিকে সর্বোচ্চ ২টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিতে হবে। ১২) মেলায় প্রবেশের জন্য টিকেট ব্যবস্থা চালু করতে হবে। উক্ত টিকেটই ভাউচার হিসেবে গন্য হবে। এ ভাউচার প্রকাশকদের কাছে অথবা বইয়ের স্টলে প্রদান করলে তারা উক্ত টিকেটের মূল্য বই বিক্রয় মূল্য থেকে সমন্বয় করতে বাধ্য থাকবে। মেলা শেষে প্রকাশকরা উক্ত টিকেট বাংলা অ্যাকাডেমিতে জমা দিয়ে টাকা ক্যাশ করে নিতে পারবে। টিকেটের প্রবেশ মূল্য আলোচনাসাপেক্ষে নির্ধারিত হতে হবে। তবে, খাবারের স্টলে এ টিকেট গ্রহণযোগ্য হবে না। ১৩) প্রকাশকদেরকেও সেলসম্যানদের মতো একই মূল্যের প্রবেশ কার্ড দিতে হবে। আর না হলে প্রকাশকদের আলাদা প্রবেশ পথের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৪) এক প্রকাশনার বই আরেক প্রকাশনায় বিক্রি করতে পারবে না। 

২৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে আজীবন নিষিদ্ধের দাবি

প্রকাশকদের তিন সংগঠন উল্লেখিত দাবিগুলো পুরণের অ্যাকাডেমি ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করে। পাশাপাশি বাংলাদেশে সৃজনশীল প্রকাশনা সেক্টরে চিহ্নিত লুটপাটকারী পতিত স্বৈরাচারের দোসর কালো তালিকাভুক্ত প্রকাশনা সংস্থা আগামী প্রকাশনী, অনিন্দ্য প্রকাশ, সময় প্রকাশন, তাম্রলিপি, কাকলী প্রকাশনী, চারুলিপি, অন্যপ্রকাশ, অনুপম প্রকাশনী, অন্বেষা প্রকাশন, বিশ্ব সাহিত্য ভবন, ন্যাশনাল পাবলিকেশন, জনতা প্রকাশ, জার্নিম্যান বুকস, পাঠক সমাবেশ, জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, কবি প্রকাশন, ঝুমঝুমি প্রকাশন, নালন্দা, পাঠশালা, পুঁথি নিলয়, অয়ন, অনার্য পাবলিকেশন্স লিমিটেড, শব্দশৈলী, নওরোজ কিতাবিস্তান, মাতৃভাষা প্রকাশ ইত্যাদি প্রকাশনা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এসব প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে মেলায় আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। সে সঙ্গে বাংলা অ্যাকাডেমির অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর সরকার আমিন, স্বকৃত নোমান ও তপন বাগচি গংদের বাংলা অ্যাকাডেমি থেকে বিতাড়িত করতে হবে বলেও দাবি জানান বৈষম্য বিরোধী প্রকাশক সমিতির নেতারা৷ 

উল্লেখিত দাবি নিয়ে প্রকাশকদের তিন সংগঠন সম্প্রতি বাংলা অ্যাকাডেমিতে অনশন রেছে। অ্যাকাডেমির মহাপরিচালকের আশ্বাসে তারা অনশন ভঙ্গ করে।  তবে আশ্বাস যদি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রাণের দাবিতে তারা যেকোনো ধরনের আন্দোলনের ডাক দিবে বলেও জানান প্রকাশক নেতারা।  

আবিষ্কার প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী দেলোয়ার হাসান আপন দেশকে বলেন, বিগত স্বৈরাচার আমলে বাংলা অ্যাকাডেমিকে স্বৈরাচারের আখড়া বানিয়ে রেখেছিলো ফ্যাসিবাদের দোসররা। প্রকাশকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বাংলা অ্যাকাডেমির কর্মকর্তারা আরাম আয়েশ করার জন্য সেটা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়।  এতে করে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে স্টল ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর জন্য আমরা প্রকাশকরা দীর্ঘদিন যাবত দাবি জানিয়ে আসছিলাম। আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। দেলোয়ার হাসান আরও বলেন, স্টল ভাড়া কমিয়ে প্রকাশনা শিল্পকে রক্ষা ককরার জন্য বাংলা অ্যাকাডেমির প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তার দোসর সূত্রাপুর আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য ধ্রুবপদ প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী আবুল বাশার ফিরোজ শেখ ও মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রকাশক ইউপিএল'এর মাহরুখ মহিউদ্দিন মেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করছে। ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে স্বৈরাচারের দোসর প্রকাশকদের মেলা উদযাপন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলা অ্যাকাডেমি ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুনর্বাসনের যে অপচেষ্টা করছেন সে ষড়যন্ত্র কোনো ভাবেই সফল হতে দেবে না প্রকাশকরা। 

সূচীপত্র প্রকাশনীর কর্ণধার সাঈদ বারী বলেন, বাংলা অ্যাকাডেমির অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে উৎখাত করা না গেলে একুশের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আর আমরা সেটা কোনো ভাবেই সফল হতে দিবো না।  
বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা জানতে বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমকে একাধিকার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়