
ছবি সংগৃহীত
মেলা শুরুর পর থেকে শুক্রবারের (০৭ ফেব্রুয়ারি) অপেক্ষায় ছিলেন প্রকাশকরা৷ কর্মব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে সপরিবারেই বইপ্রেমীরা এমন দিনে মেলায় ছুটে আসে। ছুটির দিনে মেলা লোকে লোকারণ্য হবে, স্টল ও প্যাভিলিয়নের সামনে পাঠকদের জটলা থাকবে এমন আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষায় থাকা দিনটি এলো আর প্রকাশকদের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তিও ঘটালো। পাঠকরা এলেন, মেলাকে উৎসবমুখর করে তুললেন এবং প্রিয় লেখকের পছন্দের বই কিনেই বাড়ি ফিরলেন এমন দৃশ্যই লক্ষণীয় ছিলো অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিন শুক্রবার।
এদিন ছিলো এবারের মেলার প্রথম শুক্রবার ও মেলার প্রথম শিশু প্রহর। সকাল ১১টায় মেলার প্রবেশদ্বার উন্মোচনের পরই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দৃশ্যপট পালটে যায়। দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহরের শিশু চত্বরে ক্ষুদে পাঠকদের কোলাহল, দুষ্টুমি ও বাবা-মায়ের হাত ধরে বই কেনার দৃশ্য অন্যরকম ভালো লাগার পরিবেশ সৃষ্টি করে। দুই ঘন্টার শিশুপ্রহরে বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরে প্রিয় লেখকের বইটি আদায় করে নেয় সোনামনিরা। ক্ষুদে পাঠকদের পছন্দের তালিকায় ছিলো কার্টুন,কমিকস, ছবি আঁকার বই, রূপকথার গল্পের বইসহ শিশুদের আনন্দ দানের বিভিন্ন বই।
সকালে শিশু চত্বরে কথা হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ির কাজলার নয়ানগর থেকে আগত আব্দুল হাই-জান্নাত দম্পতির সঙ্গে। নিজেদের দুই কন্যা সুমাইয়া ও মারিয়াকে নিয়ে মেলায় আসা এ দম্পতি বলেন, ডিজিটাল যুগে বাচ্চারা যখন মোবাইলে আসক্ত তখন আমরা আমাদের বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দিয়েছি। সবারই উচিত বাচ্চাদেরকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা।
কি বই ভালো লাগে জানতে চাইলে ক্ষুদে পাঠক সুমাইয়া ও মারিয়া সমস্বরে বলেন, কার্টুনের বই ঠাকুরমার ঝুলি পড়তে ভালো লাগে। শিশু চত্বরে এসময় প্রায় সকল শিশুর হাতেই বই শোভা পাচ্ছিলো। সকালে শিশুদের কোলাহল শেষে বিকেলে বড়দের আগমণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে অগ্রিম সফলতার ঘ্রাণ পায় প্রকাশকরা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে পাঠকদের ভিড়ে মেলাজুড়ে চিত্রিত হয় ভালো লাগার পরিবেশ। বিকেল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে মেলার প্রবেশদ্বার বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্টল ও প্যাভিলিয়নে বিকিকিনিতে ব্যস্ত ছিলেন প্রকাশনা সংস্থায় কর্মরতরা। পাঠকদের বইকেনার দৃশ্যে রাজ্যের ভালোলাগা ফুটে উঠে প্রকাশকদের চোখেমুখে।
এদিনের মেলা নিয়ে সৃজনী প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী মশিউর রহমান বলেন, শুক্রবারের অপেক্ষায় আমরা যে আশায় ছিলাম সে আশার পরিস্ফুরণ ঘটেছে। বিক্রি ভালো হচ্ছে জানিয়ে মুক্তদেশ প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী জাভেদ ইমন। বলেন, শুক্রবারের বিক্রির ধারাবাহিকতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এবার ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি।
ছুটির দিনের মেলা নিয়ে অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী মনিরুল হক বলেন, যেমনটি আশা করছিলাম তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। অন্যবারের প্রথম শুক্রবারের তুলনায় এবারের প্রথম শুক্রবারে ভিড় বেশি হয়েছে। বিক্রি বেশি হয়েছে। বলতে পারি প্রত্যাশার চেয়ে আমাদের প্রাপ্তিটা বেশি ঘটেছে। পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার আমরা একটি বেশি সফল মেলা পাবো বলে আশা করছি।
এদিকে, বিকেল গড়িয়ে গোধুলীলগ্নে পুথি প্রকাশের স্টলে দেখা হয় লেখক জমির উদ্দিন মিলনের সঙ্গে। নিজের মোটিভেশনাল বই "চিন্তা থেকে জয়" বইয়ের উপর পাঠকদের অটোগ্রাফ সময় এবারের মেলা নিয়ে এ লেখক বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর কর্তৃত্ববাদী মেলা থেকে এবারের মেলা অংশগ্রহণমূলক মেলায় পরিণত হয়েছে। খুবই ভালো লাগছে।
"চিন্তা থেকে জয়" বইটি পাঠকদের ভালো লাগার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জমির উদ্দিন মিলন বলেন, মানুষ এখন নতুন কিছু চায়। মোটিভেশনাল বই তরুণ প্রজন্মকে যেভাবে আকৃষ্ট করতে পারে অন্য কোনো বই সেভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনা। বইটিতে মানুষের মনোজাগতিক বিভিন্ন সমস্যার কারণ ও এর সমাধানও দেয়া হয়েছে। যার কারণে বইটি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
নতুন বই:
অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৮৪টি। গত সাত দিনে মোট নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে ৪৫৪টি।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।