
ছবি: আপন দেশ
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় ফেসবুক, সেলিব্রিটি, কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা বইমেলার বড় একটা অংশ দখল করে নিয়েছে। ভিউ ও ফলোয়ারের দাপটে সস্তা মানের কুরুচিপূর্ণ বইগুলো মূলধারার সাহিত্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এমন কথা বেশ কিছুদিন যাবত লক্ষ্য করা গেলেও এ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে অনেক প্রকাশকদের মধ্যে। ভিউ বাণিজ্যের এ সময়ে ফেসবুক সেলিব্রিটি ও সস্তামানের কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের উদ্ভট বইগুলো মেলার মাঠ দখল করে রাখলেও সবকিছুকে ছাপিয়ে চিরায়ত সাহিত্যের বইগুলো পাঠকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) একুশে বইমেলার ১৭তম দিনে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়দের জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়ে নি। পাঠকের চাহিদা থাকায় প্রকাশকরাও জনপ্রিয় এসব লেখকদের চিরায়ত বইগুলোর নতুন সংস্করণ এনেছেন এবারের মেলায়ও। মেলার বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে চিরায়ত নন-ফিকশনধর্মী বইয়ের বিপুল সমাহার লক্ষ্য করা যায়।
বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার বিক্রয়কর্মীরা জানান, বর্তমানের জনপ্রিয় লেখকদের বইয়ের পরেই পাঠকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সার, মানিক বন্দোপাধ্যায়, আল মাহমুদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও আহমদ ছফার মতো লেখকদের বই।
জোনাকী প্রকাশনী এনেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (ক্ষণিকা, যোগাযোগ, চোখের বালি), কাজী নজরুল ইসলামের উপন্যাস সমগ্র, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একা এবং কয়েকজন, তারা শঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের (কবি, গণদেবতা), শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের (শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, পথের পাঁচালী), সমরেশ মজুমদারের (প্রিয় আমার, "স্বপ্নের বাজার), ঐতিহ্য এনেছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শকুন্তলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (নৌকাডুবি, ছিন্নপত্র), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাম্য, শরৎচন্দ্রের চরিত্রহীন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লালসালু ইত্যাদি। বাঁধন পাবলিকেশন্স এনেছে- বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের (আদর্শ হিন্দু হোটেল, আরণ্যক), আহমদ ছফার বাঙালি মুসলমানের মন ইত্যাদি।
চিরায়ত বই প্রকাশে কপিরাইটের প্রয়োজন হয় কিনা এমন প্রশ্নে জোনাকী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মঞ্জুর হোসেন বলেন, লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পেরিয়ে গেলে কোনো কপিরাইটের প্রয়োজন হয় না। আমাদের প্রকাশনায় ৪০ শতাংশ চিরায়ত বইই বিক্রি হয়। যতই ফেসবুক সেলিব্রিটি ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রভাব থাকুক চিরায়ত সাহিত্যের চাহিদা ও গুরুত্ব কখনোই কমবে না বলেই আমি মনে করি। প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য'র ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, চিরায়ত বই চির নবীনের মতোই। কেবল মেলা নয়, এসব বই সারা বছরই চলে।
অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা জানান, তাদের প্রকাশনা সংস্থায় প্রেমেন্দ্র মিত্র, তারাশঙ্কর, শরৎ রচনাবলী, রবীন্দ্র রচনাবলী বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বিকেলে মেলা প্রাঙ্গনে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী মারিয়ামের সঙ্গে। বাঁধন প্রকাশনী থেকে আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ বইটি কিনেছিলেন এ তরুণী। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে ও তারুণ্যের উচ্ছাসের এ বয়সে আহমদ ছফার বই কেনা প্রসঙ্গে এ শিক্ষার্থী বলেন, চিরায়ত সাহিত্য পড়লে অন্তত কিছু জানা যায়। ফেসবুক সেলিব্রিটিদের উদ্ভট টাইপের কুরুচিপূর্ণ বই আমার ভালো লাগে না। জ্ঞান অর্জনের জন্য যেহেতু বই। অতএব জ্ঞান অর্জন করতে হলে ভালো মানের বই-ই পড়তে হবে বলে আমি মনে করি।
নতুন বই
বাংলা অ্যাকাডেমির জনসংযোগ উপ বিভাগ জানায় সোমবার অমর একুশে বইমেলার ১৭তম দিনে নতুন বই প্রকাশ হয়েছে এসেছে ১১৩টি। আর গত ১৭ দিনে মোট নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১হাজার ৬৪৪টি।
আপন দেশ/এমএস
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।