Apan Desh | আপন দেশ

পহেলা বৈশাখ দুয়ারে কড়া নাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ১১ এপ্রিল ২০২৩

আপডেট: ২০:৩২, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

পহেলা বৈশাখ দুয়ারে কড়া নাড়ছে

ফাইল ছবি

পহেলা বৈশাখের আর মাত্র দুদিন বাকি। ইতোমধ্যে ‘বাংলা নববর্ষ-১৪৩০’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করতে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন থাকবে সরকারি ছুটি।

এ উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। থাকবে ছায়ানট রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।

ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করবে। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হবে জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।

যদিও মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অসাংবিধানিক, বেআইনি ও কৃত্রিম উদ্ভাবিত দাবি করে পহেলা বৈশাখ এটি বন্ধে সরকারের মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গত রোববার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান।

এদিকে পহেলা বৈশাখ ও ঈদ ঘিরে নিরাপত্তার কোনো হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। সোমবার দুপুরে ঢাকার বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে ঈদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষ সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মার্কেট, বিপণি বিতান, মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পহেলা বৈশাখ নিয়ে কোনো হুমকি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’

পহেলা বৈশাখ উদযাপন ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে চারদিকে। ব্যস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই।

বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গ্রাম ও শহরে মেলাসহ নানা লোকজ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আর এসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাড়ে মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা। এতে ফাল্গুন থেকেই মাটির তৈজসপত্র ও খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মৃৎশিল্পীরা।

বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য, মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক এটিকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে নানা আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। দেশের সকল জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী শোভাযাত্রা বের হয়। স্থানীয় প্রশাসন রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করে।

এদিন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন নিজস্ব প্রাঙ্গণে নববর্ষ মেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এ উলক্ষ্যে আলোচনা সভা, প্রদর্শনী, কুইজ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট-একাডেমিসমূহ তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।

বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে গত ২০ মার্চ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এসব কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বাংলা নববর্ষে সকল কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।

সকল জাদুঘর ও প্রত্নস্থান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিনা টিকিটে প্রবেশের সুযোগ থাকবে। তা ছাড়া বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে জাদুঘরসমূহ বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ নববর্ষ উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। অভিজাত হোটেল ও ক্লাব বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ইফতারের আয়োজন করবে।

নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র, ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হবে।

সকল সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। 

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি চ্যানেলসমূহ রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান প্রচারের বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে অপপ্রচার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া বাংলা নববর্ষ উদযাপনকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়