Apan Desh | আপন দেশ

আবেগ-অনুভূতির ঈদ কার্ড হারিয়ে গেছে প্রযুক্তির গহ্বরে

শবনম সিঁথি

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ২২ এপ্রিল ২০২৩

আপডেট: ১৩:৫৮, ২ মে ২০২৩

আবেগ-অনুভূতির ঈদ কার্ড হারিয়ে গেছে প্রযুক্তির গহ্বরে

সংগৃহীত ছবি

রাজধানীতে তো বটেই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অলি-গলিতে, স্কুল-কলেজের সামনে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যেত পাটের বস্তা বিছিয়ে, রশি টাঙ্গিয়ে বানানো কিছু অস্থায়ী দোকান। রমজান মাস শুরু হলেই এই দোকানগুলোর অস্তিত্ব প্রকাশিত হয়। ঈদকে সামনে রেখে এইসব অস্থায়ী ঈদ কার্ডের দোকানের মালিক হতো পাড়ার স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া বন্ধুরা।

হরেক দাম। ৪/৫ জনে মিলে একশ’ টাকায় কার্ড কিনে সহপাঠীদের কাছে বিক্রি হতো ২/৩ শ’ টাকা। আবার বেশ বড়সড় দোকানের বেচাকেনা আরও বেশি ছিল। 

বিক্রেতার চাহিদা মূলের চেয়ে স্বজনরা বেশিই দিতেন কেউ কেউ।সেই লভ্যাংশের টাকা দিয়ে ঈদের দিন ঘুরতে যাওয়া। 

রাজধানীর পুরানা পল্টনের গলিতে আজাদ প্রোডাক্টস কিংবা আইডিয়াল প্রোডাক্টস থেকে নতুন নকশার ঈদ কার্ড কেনার দিনও খুব বেশি অতীতের নয়। আর যাদের বরাদ্ধ কিছুটা বেশি ছিল তাদের গন্তব্য ছিল আর্চিস কিংবা হলমার্কসের মতো অভিজাত কার্ডের শো-রুমে।

এখন আর সেদিন নেই। বর্তমান প্রজন্মের হাতে নামীদামী সব গ্যাজেট। প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয় ঈদের শুভেচ্ছা। কিন্তু এই শুভেচ্ছায় নেই কোন আবেগ, ভালোবাসা, আনন্দ, তৃপ্তি। এই প্রজন্ম হয়ে গেছে যান্ত্রিক। এদের আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসায় মরিচা ধরে গেছে প্রযুক্তির বিষবাষ্পে। আর যার প্রভাবে ঈদ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ ঈদ কার্ড হারিয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের দিন সরেজমিনে রাজধানীর পুরানা পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টসের গলিতে গিয়ে দেখা মিললো কার্ডের সব দোকানই বন্ধ। সবেধন নীলমনি হিসেবে যে শো-রুমটি খোলা ছিল সেখানেও নেই ঈদ কার্ড।

পল্টন মোড় থেকে খানিকটা এগিয়ে যেতেই আজাদ প্রোডাক্টসের গলি। এটা পুরানা পল্টন লেন হিসেবে কাগজপত্রে লেখা হলেও এটিকে এখন সবাই আজাদ প্রোডাক্টসের গলি হিসেবেই চেনে। গলির মুখে আজাদ প্রোডাক্টসের বিশাল শো-রুম। সামনে ভিড় জমিয়েছেন ফলের দোকানিরা। একই অবস্থা গলির ভেতরের আরেক শো-রুমের। সেখানে এখন বিরিয়ানির দোকান।

আরেক জনপ্রিয় কার্ডের শো-রুম আইডিয়াল প্রোডাক্টসও বন্ধ। তার পাশে এক সময় ছিল রয়াল প্রোডাক্টস। কার্ড ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এর উদ্যোক্তা এটিকে এখন খাবারের দোকানে রূপান্তরিত করেছেন।

সব বন্ধ থাকলেও আজাদ প্রোডাক্টসের মূল শো-রুম খোলা থাকবে এ প্রত্যাশায় দৃষ্টি ফিরলো আজাদ সেন্টারের দিকে। যার দোতালায় বিশাল শো-রুম আজাদ প্রোডাক্টসের। কিন্তু সেটিও বন্ধ বলে জানালেন এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মী।

একই অবস্থা কার্টুন প্রোডাক্টস, গ্রামীণ প্রোডাক্টস, বন্ধন প্রোডাক্টস, মেমোরিয়াল প্রোডাক্টস, হ্যাপি প্রোডাক্টস, আপন প্রোডাক্টস, নিউ লুক প্রোডাক্টসের শো-রুমের।

পুরানা পল্টন এলাকায় একমাত্র খোলা রয়েছে আনন্দ প্রোডাক্টসের শো-রুম। তবে সেখানে নেই কোনো ঈদ কার্ড। বিয়ের কার্ড বিক্রির জন্য চলমান রয়েছে শো-রুমটি।

কথা হলো আনন্দ প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপক মকবুল হোসেনের সঙ্গে। এখানকার দায়িত্ব নেয়ার আগে ২৭ বছর কাজ করেছেন আজাদ প্রোডাক্টসে।

তিনি আপন দেশ’কে বলেন, আমাদের কাছে কেন, এখানকার কোনো শো-রুমেই আপনি ঈদ কার্ড পাবেন না। আজাদ ও আইডিয়ালে পুরনো কিছু ঈদ কার্ড ছিল। সেগুলোও বিক্রি হয়েছে বলে শুনিনি। যার কারণে ঈদের আগের দিন এখানকার সব শো-রুম বেশিরভাগই বন্ধ। অথচ এক সময়ে ঈদের আগের দিন রাত দেড়টা-দুইটা পর্যন্ত ঈদ কার্ড কিনতে মানুষ ভিড় করতো।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকেই কার্ডের ব্যবসা খারাপ। মূলত দেশের ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় এখন মানুষ ডিজিটাল পদ্ধতিতে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এখন ভ্যালেন্টাইন্স ডে আর নববর্ষের কিছু কার্ড বিক্রি হয়। এর বাইরে আর কোনো কার্ড বিক্রি হয় না। ঈদ কার্ড বা হ্যাপি নিউইয়ারের কার্ড এখন আর বিক্রিই হয় না।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়