ফাইল ছবি
আজ ২২ শ্রাবণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস। বাঙালির জীবনের অনেকটা জুড়ে সতত বিরাজমান এই মনীষীর মৃত্যু হয় শ্রাবণের এক দুপুরে। মহাকালের চেনাপথ ধরে প্রতিবছর বাইশে শ্রাবণ আসে। হৃদয়ে বেহাগের সুর তুলে রবির কাব্য-গান-সৃষ্টি। বলা চলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম বাঙালির জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে নানাভাবে।
বাংলা ভাষাকে বিশ্ব অঙ্গনে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে তার ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের নোবেলপ্রাপ্তির ঘটনা। সাহিত্যের সীমা ছাড়িয়ে শিক্ষা, দর্শন, পল্লী ও কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি বহু বিষয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকৃতির মধ্যে রয়েছে অসংখ্য কবিতা ও গানের পাশাপাশি ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, ভ্রমণকাহিনী ও চিঠিপত্র।
দেশ-বিদেশে প্রদত্ত বক্তৃতামালা তার ভাবনা ও জীবনদর্শনের অনন্য দলিল। তার দুটি গান দুটি দেশের— বাংলাদেশ ও ভারতে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেয়েছে। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাংলাদেশের এবং ‘জন গণ মন’ ভারতের জাতীয় সংগীত। রবীন্দ্রনাথের বিচিত্র সৃষ্টির অন্যতম প্রধান ধারা তার অসাধারণ গানগুলো।
সংগীতপ্রতিভা পারিবারিক সূত্রেই বিকশিত হয়েছিল তার মধ্যে। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সংমিশ্রণে গানের বাণী ও সুরে নব নব নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তবে রবীন্দ্রসংগীত একান্তভাবেই তার নিজস্বতায় ভরপুর। মানবজীবনের যাবতীয় ভাব ও রসের ছায়া পড়েছে তার সংগীতে।
বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর অভিজাত ঠাকুর পরিবারে। কয়েক পুরুষ আগে তার পূর্বপুরুষরা পূর্ববঙ্গ (আজকের বাংলাদেশ) থেকে ব্যবসার সূত্রে কলকাতায় গিয়ে বসবাস শুরু করেছিলেন।
রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্রজীবন কথা’য় কবির মৃত্যু নিয়ে লেখেন, ‘শান্তি নিকেতনে কবি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেহ আর চলছিল না, চিকিৎসা ও সেবারও ত্রুটি নেই। অবশেষে ডাক্তাররা পরামর্শ করে ঠিক করলেন, অপারেশন ছাড়া উপায় নেই। ৯ শ্রাবণ (২৫ জুলাই) শান্তি নিকেতন থেকে কবিকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হলো। শান্তি নিকেতনের সঙ্গে অনেক বছরের স্মৃতি জড়িত কবি কি বুঝতে পেরেছিলেন, এই তার শেষ যাত্রা? যাবার সময় চোখে রুমাল দিতে দেখা গেছে।’
৩০ জুলাই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবির শরীরে অস্ত্রোপাচার হয়। তার কিছু পূর্বে শেষ কবিতা রচনা করেন—‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি, বিচিত্র ছলনাজালে হে ছলনাময়ী’।
রবীন্দ্র জীবনী থেকে জানা যায়, মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। জোড়াসাঁকোর রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে তিনি বলতেন, আর রানি চন্দ তা লিখে নিতেন। কবি বলে গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল কবির শেষ বিদায়ের দিন কয়েক আগে চৌদ্দই শ্রাবণ। রানি চন্দ সেদিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন রবীন্দ্রনাথের উবাচ কবিতাটি—‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি’।
চিকিৎসকরা কবির অস্ত্রোপাচার করলেন, কিন্তু তা নিস্ফল হয়। অবস্থা দ্রুত মন্দের দিকে যেতে লাগল। তিনি জ্ঞান হারালেন। শেষ নিশ্বাস পড়ল রাখীপূর্ণিমার দিনে, বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা বেজে ১০ মিনিট, অমৃত আলোকের নতুন দেশে চলে গেলেন কবি।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।