ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে ভোরের কাগজের সাংবাদিকদের মানববন্ধন। ছবি: আপন দেশ
অষ্টম ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধ এবং সাংবাদিক কর্মচারীদের চাকুরিচ্যুতির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে দৈনিক ভোরের কাগজ-এর সাংবাদিক কর্মচারীরা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে রোববার (০২ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২টা থেকে দুইঘণ্টাব্যাপী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ভোরের কাগজের সংবাদকর্মীদের অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী সকল দেনা-পাওনা পরিশোধের দাবি জানান সাংবাদিক নেতারা।
গত ২০ জানুয়ারি হঠাৎ একটি নোটিস টানিয়ে ৩৩ বছরের পুরনো এ সংবাদপত্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নোটিসে বলা হয়, ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা চলতি বছরের ২০২৫ সালেল ২০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
পরদিন ২১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পত্রিকাটির সাংবাদিকরা। তারা দাবি মেনে নিতে মালিকপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় মালিকপক্ষের অফিস ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। সে অনুয়ায়ী ২৩ জানুয়ারি কাকরাইলে কর্ণফুলী গ্রুপের প্রধান কার্যালয় এইচআর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। ভোরের কাগজ কর্ণফুলী গ্রুপের মালিক সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান।
সেদিন ভোরের কাগজ খুলে দেয়া না হলে পত্রিকার মালিকের অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যও গুটিয়ে ফেলতে হবে বলেও সতর্ক করেন বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা।
প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেয়া ও বকেয়া পরিশোধের দাবিতে সংবাদকর্মীদের নানা কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় রোববার (০২ ফেব্রুয়ারী) ডিআরইউর সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আগামীকাল সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারী) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন<<>> বাসস এমডিকে দোসর আখ্যা, দুঃখ প্রকাশের জন্য আল্টিমেটাম ডিইউজের
ডিআরইউ'র সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, কোনো রকম নোটিশ ছাড়া হঠাৎ পত্রিকা বন্ধ করা মেনে নেয়া যায় না। এভাবে কথায় কথায় পত্রিকা বন্ধের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ভোরের কাগজের সংবাদকর্মীদের দাবি দ্রুত মেনে নিয়ে সব দেনা-পাওনা পরিশোধ করার জন্য মালিকপক্ষের প্রতি আহবান জানান তিনি। বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ভোরের কাগজের সংবাদকর্মীদের দাবি আদায় না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ডিআরইউসহ সকল সাংবাদিক সংগঠন আমরা তাদের পাশে আছি এবং থাকবো। তা না হলে আপনি শান্তিতে থাকতে পারবেন না।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন- ডিআরইউর সহসভাপতি গাজী আনোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক দফতর সম্পাদক ডি এম অমর। সমাবেশে সাংস্কৃতিক সম্পাদক এমদাদ খান, কল্যাণ সম্পাদক রফিক মৃধা, ডিআরইউর সাবেক কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু ও তানভীর আহমেদসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সমাবেশে বক্তব্য দেন- ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওছার হোসেন, সম্পাদকীয় বিভাগের ইনচার্জ সালেক নাসির উদ্দিন, সার্কুলেশন বিভাগের ইনচার্জ তসলিম চৌধুরী, বিজ্ঞাপন বিভাগের ডেস্ক নির্বাহী মো. আক্কাছ আলী, কম্পিউটার বিভাগের ইনচার্জ গোলাম কিবরিয়া, উৎপাদন বিভাগের ইনচার্জ শরণ হাওলাদার, সিনিয়র রিপোর্টার এস এম মিজান ও সম্পাদনা সহকারি বিভাগের প্রধান মো. ইবরাহিম প্রমুখ।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ভোরের কাগজের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন হাশিম, স্পোর্টস ইনচার্জ শামসুজ্জামান শামস, বিজ্ঞাপন বিভাগের ডেপুটি ম্যানজার নুর মোহাম্মদ স্বপন প্রমুখ। মানববন্ধন ও সমাবেশে ভোরের কাগজের সব বিভাগের সাংবাদিক-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ভোরের কাগজ ৮ম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে- এমন ঘোষণা দিয়ে সরকার থেকে ৯০০/-টাকা কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। অথচ সাংবাদিক-কর্মচারিদের ওয়েজ বোর্ডের বেতন স্কেলের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে। এমনকি কোনো নিয়োগপত্র দেয়নি। কর্মসূচি থেকে অষ্টম ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী সমস্ত বকেয়া বেতন-ভাতা ও সার্ভিস বেনিফিট দিতে হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।