
ফাইল ছবি
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে দেশের হাজারো সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়বেন। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বিনিয়োগকারীরাও। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং একতরফা কিছু সুপারিশের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি মিডিয়া গ্রুপকে টার্গেট করা হয়েছে। বিশেষ করে ‘ওয়ান মিডিয়া, ওয়ান হাউস’ শ্লোগানের আড়ালে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের একাধিক সফল মাধ্যমকে ‘ঘায়েল’ করাই উদ্দেশ্য বলেই মনে হচ্ছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ ও বৃহৎ পাঠকভিত্তির এ গ্রুপে বিপুলসংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ পাঠকভিত্তির এ গ্রুপে বহু সাংবাদিক ও কর্মীর কর্মসংস্থান রয়েছে। কমিশনপ্রধানের ব্যক্তিগত রুচি-অপছন্দের কারণে এমন হঠকারী প্রস্তাব এলে তা শুধু একটি মিডিয়া হাউস নয়, বরং পুরো মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির ওপরই আঘাত।
কমিশনের প্রস্তাবে এক গ্রুপের একাধিক মিডিয়া বন্ধের এ যে চক্রান্ত, তা গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরানো বা বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম তৈরির লক্ষ্য নয়; বরং হাতে ধরে মিডিয়া বন্ধের নীলনকশা। হাজার হাজার সংবাদকর্মীকে বেকার করে তাঁদের পথে বসানোর ষড়যন্ত্র।
আরও পড়ুন>>>আমার দেশ সম্পাদককে হত্যাচেষ্টা মামলায় সাংবাদিক নেতা গ্রেফতার
কমিশনের আরও একটি বিতর্কিত প্রস্তাব হলো—গণমাধ্যমকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি পুরোপুরি অবাস্তব ও অযৌক্তিক। গণমাধ্যম একটি সেবামূলক খাত, যেখানে লাভ নয়, সমাজসেবা মুখ্য। অথচ দেশের শেয়ারবাজার এখন দুর্বল ও অস্থিতিশীল। সেখানে গণমাধ্যম নিয়ে যাওয়া মানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিতে ফেলা, এমনকি নিঃস্ব করে দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কমিশনের সুপারিশে সাংবাদিকদের বেতন ও নিয়োগব্যবস্থাও প্রশ্নের মুখে। আরেক প্রস্তাবে সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার যে কথা বলা হয়েছে, সেটি ঠিক আছে। কিন্তু সারা দেশের সাংবাদিকদের একই বেতন কাঠামোতে আনতে হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, সাংবাদিকদের বেতন হবে বিসিএস নবম গ্রেডের সমপর্যায়ের।
তবে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন—কিভাবে একটি জেলা প্রতিনিধি বা আউটস্টেশন সাংবাদিক প্রধান কার্যালয়ের রিপোর্টারের সমান বেতন পাবেন? প্রধান কার্যালয়ের সাংবাদিকরা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আসেন, তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সোর্স, পেশাদারিত্ব সবই আলাদা।
অন্যদিকে অনেক জেলা প্রতিবেদক আংশিক সময় সাংবাদিকতা করেন, মূল পেশা অন্য কিছু। এদের এক কাতারে ফেলা বাস্তব নয়। পেশাগত দক্ষতার বিচারে কেন্দ্র ও প্রান্তের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকা স্বাভাবিক। এমন বাস্তবতা উপেক্ষা করে ঢালাও নিয়ম চাপিয়ে দেয়া গণমাধ্যমের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে যখন দেশের অর্থনীতি চরম চাপে, একটি লাভজনক ব্যবসাও টিকে থাকছে না, তখন গণমাধ্যম লোকসান গুনেও সাংবাদিকদের বেতন দিয়ে যাচ্ছে। কেউ নতুন করে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। এমন সময় পেশাকে আরো চাপে ফেলা মানেই ছোট ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়া।
সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন গণমাধ্যমের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়ার অর্থ হবে—ছোট ছোট সংবাদমাধ্যমকে গলা টিপে হত্যা করা। কিভাবে পেশাদার সাংবাদিক তৈরি করা যায়, কিভাবে একটি মানসম্পন্ন মিডিয়া তৈরি করা যায়, কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে বিদ্যমান একটি মিডিয়া হাউস আরো দক্ষ ও পেশাদার হবে, বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতা করতে পারবে—তার জন্য সরকার কী করতে পারে, নিয়ন্ত্রকরা কী করতে পারেন—প্রস্তাব হতে হবে এসব।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।