Apan Desh | আপন দেশ

কুষ্টিয়ার সাংবাদিক হাসিব হত্যা, বছরেও মামলার অগ্রগতি নেই

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৫১, ৪ জুলাই ২০২৩

আপডেট: ১৫:২৬, ৪ জুলাই ২০২৩

কুষ্টিয়ার সাংবাদিক হাসিব হত্যা, বছরেও মামলার অগ্রগতি নেই

ছবি : সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার সাংবাদিক হাসিবুর রহমান হত্যার এক বছর হলো। কিন্তু এই এক বছরে মামলার কোনও অগ্রগতি নিই। হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী হাসিবুরের চাচা মিজানুর রহমান। 

তিনি বলেন, আমরা হতাশ। এই এক বছরে মামলার ১ শতাংশও অগ্রগতি দেখছি না। এই পর্যায়ে এসে বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। পুলিশের সহযোগিতা কম। তারা আর কোনো যোগাযোগ করে না। মামলার কী অবস্থা সে সম্পর্কে কিছুই জানি না।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌ থানার পরিদর্শক ও মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। কিন্তু সর্বশেষ মূল আসামির হদিসই এখনো পাওয়া যায়নি। অভিযোগপত্র কবে দিতে পারবেন, তা–ও বলা মুশকিল। কাজ চলমান আছে।

আরও পড়ুন <> সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ড: বাবুর সহযোগি নয়ন গ্রেফতার

২০২২ সালের ৩ জুলাই রাত নয়টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে পত্রিকা অফিসে ছিলেন হাসিবুর। তখন মুঠোফোনে একটি কল পেয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। ৭ জুলাই দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় গড়াই নদে নির্মাণাধীন গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচ থেকে হাসিবুরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৮ জুলাই রাতে হাসিবুর রহমানের চাচা মিজানুর রহমান অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামী করে কুমারখালী থানায় মামলা করেন।

নিহত হাসিবুর কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসা ছিল তার।

এক বছরের হাসিবুর হত্যা মামলার অবস্থা জানতে হাসিবুরের পরিবার, সহকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হাসিবুর নিখোঁজ ও হত্যার শিকার হওয়ার পর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে নানা কর্মসূচি নেন। প্রশাসন সে সময় একটু নড়েচড়ে বসে। ১৬ জুলাই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে র‍্যাব জানিয়েছিল, হাসিবুর হত্যায় জড়িত সন্দেহে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার কাজী সোহান শরীফ (৪৪) এবং চর কুঠিপাড়ার খন্দকার আশিকুর রহমান ওরফে জুয়েলকে (৪০) গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব।

আরও পড়ুন <> বাংলাদেশে গত ৬ মাসে ১১৯ সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার

অবশ্য এক মাস পর তারা জামিনে বের হন। কাজী সোহান শরীফ একসময় স্থানীয় একটি পত্রিকায় কাজ করতেন। বর্তমানে এনজিও কর্মী। আশিকুর রহমান কুষ্টিয়া পৌর বাজারে মাছের আড়তে কাজ করেন।

একই বছরের ২২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খাইরুল আলম একজন আসামিকে গ্রেফতার করে গণমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসেন। গ্রেফতার ইমরান শেখ ওরফে ইমন (৩২) কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকার স্যার ইকবাল রোডের বাসিন্দা শামসুল আলমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ায় অস্ত্র, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশ সুপার দাবি করেছিলেন, পেশাগত কারণে সাংবাদিক হাসিবুর রহমান খুন হননি। তবে তদন্তের স্বার্থের কথা বলে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের কারণ বিষয়ে আর কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। কয়েক মাস পর জামিনে ছাড়া পান ইমরান।

আরও পড়ুন <> সাংবাদিকদের আতঙ্কের জনপদ জামালপুর, প্রথম খুন নাদিম

বাদী বলেন, মামলাটি নৌ পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। সে সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌ থানার উপপরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক। তিনি দুই-একবার যোগাযোগ করেছিলেন। এরপর তিনিও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

যোগাযোগ করা হলে আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বদলি হয়ে খুলনায় চলে আসি। মামলাটির কী অবস্থা জানা নেই। কে তদন্ত করছে সেটিও জানি না।

বাদী মিজানুর রহমান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কেন, কী কারণে তাকে হত্যা করা হলো, সেটির কিছুই জানতে পারব না? এটা তো হতে পারে না। মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার জন্য গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বরাবর আবেদনপত্র ডাকযোগে পাঠিয়েছিলেন মিজানুর। সেই আবেদনেরও কোনো জবাব পাননি তিনি।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়