ফাইল ছবি
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকান্ডের ঘটনায় এজাহার ভুক্ত সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে অনশন কর্মসূচী পালিত হয়েছে।
শনিবার (১৫ জুলাই) সকাল ৮ টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে অনশনে বসেন বকশীগঞ্জে কর্মরত সকল সাংবাদিকরা। আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল আসামিকে গ্রেফতার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
পরে বেলা দেড়টার দিকে বকশীগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম সওদাগর সাংবাদিকদের সঙ্গে একাত্ত্বতা ঘোষণা করে অনশনে আসেন। এ সময় সামনে সাংবাদিকদের সকল আন্দোলনে পাশে থাকার ঘোষণা দেন মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর।
অনশন চলাকালে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন সাংবাদিক জিএম সাফিনুর ইসলাম মেজর। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তাই আজকের মত সাংবাদিকদের অনশন ভাঙ্গার অনুরোধ করেন মেয়র। মেয়রের অনুরোধে দুপুর ২ টার দিকে অনশন ভাঙ্গেন সাংবাদিকরা। খেজুর ও জুস খাইয়ে অনশন ভাঙ্গান মেয়র।
আরও পড়ুন<> ফুলেল শ্রদ্ধায় কার্টুনিস্ট এম এ কুদ্দুসকে চিরবিদায় জানাল সাংবাদিকরা
অনশনে সাংবাদিক নাদিম হত্যার বিচার ও আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র, সিনিয়র সাংবাদিক এম শাহীন আল আমীন, সরকার আবদুর রাজ্জাক, মেলান্দহ রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি শাহজামাল, সরওয়ার জামান রতন, আশরাফুল হায়দার, আবদুল লতিফ লায়ন, সাফিনুর ইসলাম মেজর, সলিমুল্লাহ সেলিম, মাসুদ উল হাসান, জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু, রাজ্জাক মাহমুদ, রাশেদুল ইসলাম রনি, এমদাদুল হক লালন, মতিন রহমান, ছালাম মাহমুদ, আল মুজাহিদ বাবু, মনিরুজ্জামান লিমন, নুর আলম নয়ন ও শাহনাজ পারভীন প্রমূখ।
বক্তারা বলেন আমাদের দাবি একটাই নাদিম হত্যার বিচার চাই। নামীয় সকল আসামিকে গ্রেফতার চাই।
বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম শাহীন আল আমীন বলেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এজাহারভুক্ত ২২ জন আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে মাত্র ৫ জন। এখনো নামীয় ১৭ জন আসামি ধরাছোয়ার বাইরে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এজাহারভুক্ত সকল আসামিকে গ্রেফতার করতে হবে।
বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহেল রানা মামলার বিষয়ে বলেন, মামলাটি জামালপুর গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত করছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরাও মাঠে কাজ করছি। আসামিরা যেখানেই পালিয়ে থাকুক তাদেরকে আইনের মুখোমুখি করা হবে। পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে পৌর শহরের সরকারি কলেজ মোড়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। সন্ত্রাসীরা তাকে নৃশংসভাবে আঘাত করে ও জখম করে ফেলে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বকশীগঞ্জ হাসপাতাল ও পরে জামালপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ জুন বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই দিন দুপুরেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নাদিম।
এই ঘটনায় ১৭ জুন সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামি করে ২২ জন নামীয় ও ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আসামিদের সনাক্ত করে পুলিশ। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে নামীয় ২২ জন আসামির মধ্যে মাত্র ৫ জন আসামি ধরা পড়েছে। চেয়ারম্যান পুত্র রিফাতসহ ১৭ জন নামীয় আসামি এখনো পলাতক রয়েছে। সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে পুলিশ রিমান্ডে ও জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান আসামি বহিস্কৃত ইউপি চেয়ারম্যন মাহমুদুল আলম বাবু, রেজাউল করিম ও মনিরুজ্জামান মনির হত্যার দ্বায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
নামীয় ১৭ জন আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সাংবাদিকরা। দ্রুত গ্রেফতার না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক নাদিম বাংলানিউজ টোয়েটিফোর ডট কমের জেলা প্রতিনিধি এবং একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি ও জামালপুর অনলাই জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সহ-সভপতি ছিলেন।
আপন দেশ/প্রতিনিধি/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।