ফাইল ছবি
বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বিল লাগে না। আবার কোনো মাসে আগে ৩২ টাকাও। এমস আধ্যাতিক মিটারের মালিক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তার লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের বাড়িতে বিদ্যুতের ডিজিটাল মিটার আছে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় যতেচ্ছা। এপ্রিল থেকে জুলাই এই সময়ে প্রতিমাসে ৩৭ টাকা করে বিল প্রস্তুত করেছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)।
২০২০ সালের নভেম্বরে বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ৩২ টাকা। এছাড়া কোনো মাসে ৭২, কোনো মাসে ৫২ আবার কোনো মাসে ৬৫ টাকা বিল দেখানো হয়েছে। সর্বোচ্চ একটি বিল ২৪০৮ টাকা দেখানো হয়েছে ২০২২ সালের আগস্টে। প্রায় চার বছরে মোট বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১১ হাজার ৬২০ টাকা। আর সেই বিলও এখনো বকেয়া।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট-২ আসনে টানা দুবার সংসদ-সদস্য। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। নেসকো থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, নুরুজ্জামান আহমেদের নামে একটি সেচ সংযোগও রয়েছে। যার ডিজিটাল কনজুমার নম্বর ২৮০০৪৮৯৪, মিটার নম্বর ৫১৫৬২৫১৩।
এ মিটারে প্রায় চার বছরে ৬১ হাজার ৩৪৪ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেখানো হলেও এখনো তা বকেয়া রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত গড়ে প্রতিমাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকার বিল দেখানো হলেও জুন ও জুলাইয়ে শূন্য বিল দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের মার্চে ১৭ হাজার ২৩৬ টাকা বিল দেখানো হলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শূন্য বিল। গত বছর এপ্রিলে বিল দেখানো হয়েছে ৮০৪ টাকা এবং মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে বিল দেখানো হয় ১৮০ টাকা করে।
মন্ত্রীর ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ তার দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত করিমউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি নেসকোর একজন আবাসিক গ্রাহক। তার বাড়িতে ব্যবহৃত মাসিক বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে জানুয়ারিতে ৭২, ফেব্রুয়ারিতে ১১১, মার্চে ১৫১, এপ্রিলে ১৮৯, মেতে ২২৯ এবং জুনে ৫১২ টাকা।
শুধু জুলাইয়ে সর্বোচ্চ বিল ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা বিল করা হয়েছে। প্রায় চার বছরে বিল দেখানো হয়েছে ৭৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, যা এখনো বকেয়া রয়েছে। মন্ত্রীর ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর একটি বাণিজ্যিক সংযোগে গেল প্রায় চার বছরে বিল বকেয়া রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ১১৩ টাকা। তার নামে একটি সেচ পাম্পের সংযোগও রয়েছে। গেল চার বছর ধরে বিল বকেয়া রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১১ টাকা।
জানা যায়, মন্ত্রী, তার ছেলে ও ছোট ভাইয়ের বাড়ির প্রতিটি রুমে এয়ার কন্ডিশন (এসি), ফ্রিজ, ফ্যানসহ সব ধরনের ইলেকট্রিক পণ্য ব্যবহৃত হয়। তাদের সেচ পাম্প থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ জমিতে ইরি ধান ও ভুট্টা চাষ করতে পানি সরবরাহ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরনবী বলেন, ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় নেসকো কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আবার মিটার বন্ধ থাকলেও ভূতুড়ে বিল করেছে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। কিন্তু মন্ত্রীর বিল বকেয়া থাকলে কোনো সমস্যা হয় না। যত দোষ সাধারণ মানুষের।
এ বিষয়ে মন্ত্রীর ছেলে ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ বলেন, বেশির ভাগ সময়ই আমরা ঢাকায় থাকি। আমাদের বাড়ির দেখাশোনা করে কেয়ারটেকার। বিদ্যুৎ বিল বাকি আছে কি না, বিষয়টি কেয়ারটেকারই জানে। আমরা নিয়মিত সব বিলই পরিশোধ করি।
বকেয়া বিল আদায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বা মামলা হবে কি না জানতে চাইলে রংপুর নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ওনাদের তো টাকার অভাব নেই। আমরা আগে কথা বলে দেখি। তিনি আরও বলেন, অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের বিল বকেয়া রয়েছে। বকেয়া বিল আদায়ে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করতে কোনো গাফিলতি করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
আপন দেশ/এবি/তথ্যসূত্র: যুগান্তর
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।