Apan Desh | আপন দেশ

প্রেসিডেন্টের এপিএসও ফেঁসে যাচ্ছেন, যিনি এডিসি সানজিদার স্বামী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১১:৩৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

প্রেসিডেন্টের এপিএসও ফেঁসে যাচ্ছেন, যিনি এডিসি সানজিদার স্বামী

প্রেসিডেন্টের এপিএস আজিজুল হক মামুন, এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিন: ফাইল ছবি

ঢাকা: ছাত্রলীগ নেতাদের থানায় তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনায় ইতোমধ্যে ডিএমপি’র রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশীদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মারধরে অংশ নেয়ার কারণে শাহবাগ থানার পরিদর্শক অপারেশনস মো. গোলাম মোস্তফাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটিও ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনার দিন প্রেসিডেন্টের এপিএস আজিজুল হক মামুনের ভূমিকা নিয়ে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঘটনার দিন বারডেম হাসপাতালে মামুনই প্রথম এডিসি হারুনের ওপর হামলা করে তার চশমা ভেঙে দিয়েছেন। একই কথা বলেছেন মামুনের স্ত্রী ডিএমপি’র ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তা সানজিদা আফরিন। সানজিদাকে ঘিরেই শনিবারের ( ৯ সেপ্টেম্বর) ওই ঘটনা ঘটে। ডিএমপি’র পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিও এখন বারডেমের ঘটনাকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে।

সূত্রগুলো বলছে, ঘটনার দিন মামুন হাসপাতালে গিয়ে তার স্ত্রী এডিসি সানজিদা আফরিন ও এডিসি হারুনকে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হন। এক পর্যায়ে এডিসি হারুনের ওপর চড়াও হন তিনি। এসময় মামুনের পক্ষ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতারাও ভূমিকা রাখেন।

পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ফেঁসে যাবেন এপিএস মামুন। এ ছাড়া থানায় তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের কারণে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত ও অপারেশন), বেশ কয়েকজন এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলও শাস্তির আওতায় আসবেন। ঘটনার দিন তারা ছাত্রলীগ নেতাদের থানার ভেতরে মারধর করেন। 
প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল, তদন্ত কমিটি ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে ওই দিনের ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে মামুনের হাত ধরে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ছাত্র জীবন থেকেই পরিচয় এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিনের। দুজনের মধ্যে তখন থেকে ঘনিষ্ঠ প্রেমের সম্পর্ক। ওই সময়ই দুজন বিয়ে করেছিলেন এমন কথাও শোনা যায়। যদিও তারা বিষয়টি অস্বীকার করছেন। পরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ও বর্তমানে প্রেসিডেন্টের এপিএস মামুনের সঙ্গে সানজিদার বিয়ে হয়। কিন্তু সংসার জীবনে এই দম্পতি সুখী ছিলেন না। ৩৩তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর ট্রেনিংয়ে থাকাকালীন সময় তিনি একই ব্যাচের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ান। বিষয়টি জানাজানির পর বিভাগীয় তদন্ত পর্যন্ত গড়ায়। ওদিকে বিয়ের পরও এডিসি হারুনের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ও কথা হতো। দুজনের চাকরির পোস্টিং ভিন্ন জায়গায় হলেও সম্পর্ক ঠিকঠাক থাকতো। হারুনের সঙ্গে স্ত্রীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে এটা আগে থেকে জানতেন এপিএস মামুন। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। মামুন স্ত্রীকে সবসময় নজরদারিতে রাখতেন।

ঘটনার দিন মামুনের সোর্সই তার কাছে খবর দেয় সানজিদা বারডেম হাসপাতালে প্রবেশ করেছেন। তার কিছুক্ষণ পর সেখানে এডিসি হারুনও প্রবেশ করেন। মামুনের নির্দেশে আগে থেকে সেখানে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ছিলেন। আর তিনি সেখানে আসার সময় আরও কয়েকজনকে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। সূত্রগুলো বলছে, হাসপাতালের একটি কেবিনে হারুন ও সানজিদাকে একসঙ্গে দেখে চটে যান মামুন। পরে তিনি হারুনকে মারধর শুরু করেন। তার সঙ্গে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতারাও ছিলেন মারমুখী। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ব্যাচমেট তিন এডিসিকে সেখানে নিয়ে যান। কিন্তু তারা মামুনের সঙ্গে ঝামেলা হচ্ছে দেখে নিজেরা সতর্ক অবস্থানে থাকেন। কারও পক্ষ না নিয়ে দু’পক্ষের সমঝোতার চেষ্টা করেন। পরে হারুন সেখান থেকে বের হয়ে শাহবাগ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, দুই পরিদর্শকসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডাকেন। তারা গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করে থানায় তুলে নিয়ে আসেন। বারডেম হাসপাতালের প্রত্যক্ষদর্শী কর্মীদের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সময় মামুনের সঙ্গে তার স্ত্রী তুই তুকারি করে কথা বলতে দেখেছেন তারা। 

মঙ্গলার (১২ সেপ্টেম্বর) ঘটনার বিষয়ে একটা বর্ণনা এসেছে এডিসি সানজিদার মুখ থেকে। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে আমি কার্ডিয়াক প্রবলেমে ভুগছিলাম। ২০১৯ সাল থেকে হাইপার টেনশনের জন্য নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছি। সর্বশেষ ৪ থেকে ৫ মাস ধরে এটা বেড়ে যায়। এক সপ্তাহ ধরে বুকে ব্যথাও বেড়ে যায়। শনিবার ব্যথা বাড়ায় আমি ডাক্তার দেখাতে চাই। কিন্তু আমি নিয়মিত যে ডাক্তারকে দেখাই তিনি দেশের বাইরে থাকায় ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে কোনো একজন ডাক্তারকে দেখাতে চাই। ইমার্জেন্সি হওয়ায় আমি স্যারকে (এডিসি হারুন) সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেয়ার অনুরোধ করি। স্যার ওসির মাধ্যমে আমাকে সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ডাক্তার কনফারেন্স রুমে ব্যস্ত থাকায় আমি বিষয়টি স্যারকে জানাই। কারণ আমার আর্জেন্ট দরকার ছিল।

তিনি বলেন- আমি পাশে আছি দেখি এসে ব্যবস্থা করা যায় কিনা। স্যার এসে ওনাদের সঙ্গে কথা বলে একজন ডাক্তার ব্যবস্থা করেন। ডাক্তার আমাকে দেখে বেশ কয়েকটি টেস্ট দেন। যে সময় ঘটনাটি ঘটছিল তখন আমি ইটিটি করাচ্ছিলাম। ইটিটি করাতে ২০-২৫ মিনিট লেগে যায়। ইটিটি যখন শেষ পর্যায়ে তখন বেশ চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পাই। প্রথম যে শব্দটা আমি শুনতে পাই তা হচ্ছে স্যার বলছিলেন, ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুলছেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। আমি প্রথমে মনে করেছিলাম অন্য কারও সঙ্গে কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখতে পাই আমার স্বামী সেখানে। তিনি কেন গিয়েছেন আমি জানি না। তিনি আউট অব মাইন্ড ছিলেন। তিনি খুবই উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। তার সঙ্গে কয়েকজন ছেলেও ছিল। তারা স্যারকে মারতে মারতে এ রুমটার ভেতরে নিয়ে আসেন। একটা পর্যায়ে স্যার তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইটিটি রুমের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালেন। ওই সময় অপ্রত্যাশিতভাবে আমার স্বামী ওই ছেলেগুলোকে বলে তোরা ভিডিও কর। আমি তখন ইটিটির পোশাকে ছিলাম। ইটিটির পোশাক কেমন থাকে তা আপনারা জানেন। গায়ে বিভিন্ন তার লাগানো ছিল। স্বাভাবিকভাবে পোশাকটা শালীন অবস্থায় ছিল না। তখন আমি আমার স্বামীর সঙ্গে সাউট করছিলাম যে, এ রুমে তো কোনো ছেলে ঢুকার কথা না। আপনি কেন ঢুকেছেন এতগুলো লোককে নিয়ে। আবার এদের বলছেন ভিডিও করতে। এটা নিয়ে যখন সাউট করছিলাম তখন তিনি আমাকে দুই/তিনটা চড় দেন। তখন আমার ড্রাইভারও ছুটে আসেন। আমার ড্রাইভারের উপর দিয়ে ওনার (হারুন) গায়ে হাত তোলা হয়। একটা ছেলে যখন ভিডিও করছিল তখন আমি তার থেকে মোবাইল নিয়ে নিতে চাই। তখন তার সঙ্গে আমার হাতাহাতি হয়। আমি কোনো অবস্থায় চাইনি আমি যে পোশাকে আছি একজন মহিলা হিসেবে তারা যেন সে পোশাকে আমার ভিডিও করে। 

তিনি বলেন, স্যারতো কলিগ হিসেবে বাইরে অবস্থান করছিলেন নরমাল কার্টিসির অংশ হিসেবে। আসলে তাদের ইন্টেনশন দেখে মনে হচ্ছিল তারা যে কোনোভাবে দুইজনকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে একটা ভিডিও করতে চাচ্ছেন। যেটা পরবর্তীতে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ইউজ করবেন। তাদের দুই-তিনজনের হাতে ক্যামেরা ছিল। যে ছেলেকে আহত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে তার থেকেও কয়েকবার ক্যামেরা নেয়ার চেষ্টা করেছি আমি। স্যার যেহেতু আমার পেছন দিকে নিরাপত্তার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন তখন ওরা আমার গায়ের ওপর দিয়ে গিয়ে ওনাকে মারার চেষ্টা করেছেন। তখন স্বাভাবিকভাবে আমার গায়েও টাচ্‌ লেগেছে। আমার স্বামীর সঙ্গে উনি সাউট করছিলেন। ওনারা স্যারকে ওখান থেকে বের করার চেষ্টা করছেন। তখন স্যার বললেন- আমিতো এখান থেকে বের হলে আপনারা আমাকে মেরে ফেলবেন। আসলে খুব বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তখন স্যার বলেছেন, আমি থানায় ফোন দিয়েছি তারা এলে আমি এখান থেকে বের হবো। এর মধ্যে হাসপাতালে সিকিউরিটি এসেছেন। তারা আসার পর স্যার নিজের সেফটির জন্য সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেন। ১০-১৫ মিনিট পর থানা থেকে ফোর্স আসছিল তারপর তারা নিচে যায়। আমার বডিগার্ডও তাদেরকে নিবৃত করার চেষ্টা করেছে তারা আমার বডিগার্ডের গায়েও হাত তুলেছে আমার গায়েও হাত তুলেছে। 

এডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, গত শনিবার ( ৯ সেপ্টেম্বর) আমি আমার বাবা- মা’কে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছি। দুপুর ২টার দিকে আমাদের এডিসি ক্রাইম-১ (সানজিদা আফরিন) ফোন করে বলেন- ওনার বুকে ব্যথা হচ্ছে বারডেমে ড. রশীদ স্যারের সিরিয়ালের ব্যবস্থা করা যায় কি না। তখন আমি আমাদের ওসি রমনা আবুল হাসান সাহেবকে জানাই একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করার জন্য। পরবর্তীতে তিনি আমাকে জানান সন্ধ্যা ৬টায় একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করা হয়েছে। আমি সেটি এডিসি ক্রাইম-১ কে জানাই। উনি সন্ধ্যা ৬টায় সেখানে যান। কিন্তু ডাক্তার বারডেমের কোনো একটা কনফারেন্স বা প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় সময় দিতে পারছেন না। কিন্তু পেশেন্ট সেখানে গিয়ে অসুস্থ ফিল করছেন। তিনি আমাকে জানান, এখানে যে ডাক্তারের সিরিয়াল দেয়া হয়েছে তিনি সম্ভবত সময় দিতে পারবেন না, বাট আমি সিক ফিল করছি। তখন আমি তাকে বলি আমি পাশে আছি এসে  দেখি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলি। আমি গিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার পর ডাক্তার দেখে তাকে ৩টা টেস্ট দেন। ইসিজি, ইকো, ইটিটি। যখন ইটিটি রুমের ভেতর পেশেন্ট ছিলেন আমি স্বাভাবিকভাবে বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। তখন আজিজুল হক মামুনসহ কয়েকজন সেখানে আসেন। তারা প্রথমে পেশেন্টের রুমে যান। পেশেন্টকে দেখে তিনি বাইরে এসে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আমার বাম চোখের ওপর একটা ঘুষি মারেন। ঘুষি মারার পর আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। উনি আমার ইউনিভার্সিটির বড় ভাই। ওনাকে আমি বললাম ভাই আপনি আমাকে হঠাৎ কেন মারলেন। আপনিতো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। এটাতো কোনো ম্যানারিটির মধ্যে পড়ে না। তখন তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও আমার ওপর চড়াও হয়। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ইটিটি রুমের ভেতরে নিয়ে যায়। ওখানেও আমাকে মারধর করা হয়। পরবর্তীতে আমি আত্মরক্ষার্থে শাহবাগ থানায় ফোন দেই। শাহবাগ থানা পুলিশ সকলকে পরবর্তী থানায় নিয়ে যায়। 

ওদিকে মঙ্গলবার ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেছেন, থানায় নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের নির্যাতনের ঘটনার সূত্রপাত বারডেম হাসপাতালে। ওইদিন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনই আগে এডিসি হারুনের ওপর হামলা করেছিল এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সেটাও তদন্তে আসা উচিত। উনি (এপিএস মামুন) একজন সরকারি কর্মকর্তা। পুলিশের ওপর প্রথম হামলাটা তিনিই করেছিলেন। তিনি ইচ্ছা করলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন। অথবা তারও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছিল তাদের অবহিত করতে পারতেন। কিন্তু উনি তা না করে হাসপাতালের ভেতরে অসুস্থ মানুষের সামনে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ধাওয়া করেন। তার চশমা ভেঙে ফেলেন, তার ওপর আঘাত করেন। এটা সঠিক করেছেন কি না তা আমি জানি না, তবে এর তদন্ত হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, পুলিশ কখনো ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের দায় নেয় না। আমি মনে করি এ ঘটনায় স্বাধীনভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সঠিকভাবে ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদন শিগগির দেবে। তখন আসল ঘটনা জানতে পারবো আমরা।

এদিকে, ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক মারধরের শিকার আহত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমকে দেখতে মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি সেখানে বেশকিছু সময় অবস্থান করেন এবং আহত ছাত্র নেতার শরীরের খোঁজ-খবর নেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারা দোষী তা বলা যাচ্ছে না। দুইজন অফিসারকে আইডেন্টিফাই করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত কমিটিও রিপোর্ট দিলে কার কতটুকু দোষ সেটা জানা যাবে। তদন্ত কমিটি ঘটনার সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে দেখবে কে কে দোষী এবং প্রকৃত ঘটনা কি, কেন ঘটনাটি ঘটলো এবং কে কে কতটুকু দোষী। এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি আমাদের প্রতিবেদন দেবে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা সরকারের কাছে পাঠাব ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

ঘটনার সময় এডিসি হারুনের গায়েও হাত তোলা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দিবে, তখন সার্বিক চিত্রটা আমাদের সামনে আসবে। আমরা প্রাথমিকভাবে দেখেছি একজন ছাত্রকে থানার ভিতরে নিয়ে মারধর করার বিষয়টি বেআইনি। সেটির ওপর ভিত্তি করে আমরা প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পরে তদন্ত শেষে আরও অনেক বেশি আসলে সেসব বিষয় দেখা হবে।

ওদিকে, সাময়িক বরখাস্তের পর নিয়মানুযায়ী পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার হারুন মঙ্গলবার অফিস করেছেন। সন্ধ্যায় এক অফিস আদেশে তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা তথ্য জানানো হয়। 

আরও ৫ দিনের সময় চেয়েছে তদন্ত কমিটি

ডিএমপি কমিশনারের গঠিত ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিকে ২ দিনের ভেতরে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কমিটি এই সময়ে তদন্ত শেষ করতে পারেনি। তাই তারা কমিশনারের কাছে আরও ৫ দিনের সময় নিয়ে আবেদন করেছে। কমিটির সদস্য ও রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ্‌ বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ, সাক্ষ্যগ্রহণ, জিজ্ঞাসাবাদসহ অনেক কাজ বাকি। সেজন্য তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়