ছবি : সংগৃহীত
প্রতি বছর এক কোটি ৬০ লাখ বাড়তি যাত্রীসেবার লক্ষ্য নিয়ে আজ শনিবার (৭ অক্টোবর) উদ্বোধন হচ্ছে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাত্রীদের মতো সব প্রক্রিয়া শেষে তৃতীয় টার্মিনালে ঢুকে নির্ধারিত হলরুমে গিয়ে সরকারের এই বড় প্রকল্প আংশিকভাবে চালুর প্রক্রিয়া উদ্বোধন করবেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হবে।
নতুন এই টার্মিনালের নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরসহ অনেক বিখ্যাত স্থাপত্যের স্থপতি রোহানি বাহারিন।এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের (এডিসি) মাধ্যমে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাং এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে।
জানা গেছে, উদ্বোধনের পরপরই বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইনস। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে বর্তমানের দ্বিগুণ বেশি যাত্রীকে সেবা দেয়া যাবে। পুরনো দুটি টার্মিনালের বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
বেবিচক বলছে, এই টার্মিনাল পুরোদমে চালুর মাধ্যমে দেশের আকাশপথের যাত্রীসেবায় দিনবদল ঘটবে। এর অত্যাধুনিক নানা ব্যবস্থা বিশ্বপরিমণ্ডলে দেশের এভিয়েশন সেবাকে নতুনভাবে তুলে ধরবে।
এই প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর হলেও নির্মাণ শুরুর তিন বছর নয় মাসেই পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো তৃতীয় টার্মিনাল। এই প্রকল্পে ব্যয় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা, সরকার দিচ্ছে পাঁচ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রা শুরু ১৯৮০ সালে। এত দিন দেশের প্রধান এই বিমানবন্দর দুটি টার্মিনাল নিয়ে চলছিল। এসব টার্মিনালে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি এয়ারলাইনসের ১২০ থেকে ১৩০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটের ১৯ থেকে ২১ হাজার যাত্রী প্রতিদিন এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে। এসব যাত্রীকে মানসম্মত সেবা দিতে বিমানবন্দরে বর্তমানে চালু থাকা কম আয়তনের দুটি টার্মিনাল যথেষ্ট নয়। এ কারণে মূল টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিতে (পিপিপি) এই টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পাচ্ছে জাপান।
বেবিচক সূত্র বলছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে টার্মিনালটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হতে আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন <> নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে দিশাহারা মানুষ
নতুন টার্মিনাল নির্মাণের পর সুইস এয়ার, এয়ার কানাডা, এয়ার ফ্রান্সসহ অন্তত ১৫টি নতুন বিদেশি এয়ারলাইনস এরই মধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। উদ্বোধনের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি।’
তিনি বলেন, যখন প্রকল্প শুরু হয় তখন করোনা মহামারি এলো।কিন্তু কাজ অব্যাহত ছিল। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় শুধু টার্মিনাল ভবন নয়, আমদানি ও রফতানির কার্গো ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। কার্গো কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী মার্চ-এপ্রিলের দিকে কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করা যাবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এখন ক্যালিব্রেশন, ট্রায়ালের পাশাপাশি যারা এগুলো পরিচালনা করবে, তাদের প্রশিক্ষণের পর এটি হস্তান্তর করা হবে। ভালো মানের সেবা দিতে জাপানি ঠিকাদারকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘বিমানবন্দর একটা দেশের ড্রয়িংরুমের মতো। আমাদের দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু একটা সুন্দর এয়ারপোর্ট ছিল না। ফলে নতুন এই উদ্যোগ খুবই দরকার হয়ে পড়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা হিথরো, জন এফ কেনেডি, চাঙ্গি এয়ারপোর্ট দেখেছি। সব কিছু দেখেই আমরা একটি অত্যাধুনিক বিমানবন্দর যাত্রীদের উপহার দিচ্ছি। এটি পুরোপুরি চালু হলে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে।’
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর (অব.) এম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল না হওয়া পর্যন্ত আগামী চার বছরে যে হারে যাত্রী বাড়বে, তা সামাল দিতে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।