ফাইল ছবি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন মিয়া জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিয়া আরেফি নামে একজন। সর্বশেষ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে তাকে থানাহাজত থেকে আদালতে নেয় পুলিশ। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আমাদের পাবনা প্রতিনিধি জানান, ওই জেলায় তার পৈতৃক সূত্রে বাড়ি রয়েছে। মাঝেমধ্যেই তিনি এই বাড়িতে আসতেন। মাস তিনেক আগেও তিনি পাবনায় গিয়েছেন। তবে এখানে তার আত্মীয়স্বজন তেমন কেউ নেই। বাড়ির আশপাশের মানুষ তাকে চেনেন ‘বেলাল’ নামে।
এদিকে রাজধানীর পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া বলেন, আরেফিকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করেনি। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পল্টন থানায় রোববার মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আরেফিসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার বাকি দুই আসামি হলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা মো. ইশরাক হোসেন। পুলিশ সূত্র জানায়, অপরের রূপ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর আগে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রোববার সকালে আরেফিকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, পাসপোর্ট অনুযায়ী তার আসল নাম জাহিদুল ইসলাম মিয়া। তিনি বাংলাদেশি-আমেরিকান।
আপন দেশের পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনায় আরেফির আত্মীয়স্বজন তেমন কেউ নেই। সোমবার দুপুরে পাবনা জেলা সদরের দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লায় গিয়ে দেখা যায়, পুরনো একতলা একটি বাড়ি। লোকজন তেমন নেই। একজন ভাড়াটে সেখানে থাকেন। নাম মো. রইচ উদ্দিন। তিনিই বাড়িটি দেখভাল করেন।
রইচ উদ্দিন বলেন, বাড়ি থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই মিয়া আরেফি পাবনায় আসতেন। মাস তিনেক আগেও একবার এসেছিলেন। তখন তার সঙ্গে কিছু কথা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন, তার শ্বশুরবাড়ি ঢাকায়। তাই ঢাকাতেই স্থায়ী নিবাস গড়ার চিন্তা করছেন।
পাবনা জেলা সদরের দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়া আরেফি ওরফে বেলালরা ১০ ভাই-বোন। তাদের পৈতৃক বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার মানিকদিয়ার গ্রামে। তার বাবা পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সুবাদে পাবনা জেলা সদরের দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লার শায়েস্তা খাঁ সড়কে জমি কিনে বাড়ি করেন। একসময় তারা পরিবার নিয়ে এই বাড়িতেই থাকতেন। ৩০-৩৫ বছর আগে সপরিবারে আমেরিকা চলে যান।
মিয়া আরেফির প্রতিবেশী হাদুল মিয়া বলেন, বহু বছর আগে থেকেই আরেফি ও তার পরিবার আমেরিকা থাকেন। কখনো আমি তাকে চিনি না। তিন-চার মাস আগে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তার বাড়ির সীমানা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা হয়। আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তা খারাপ, তখন সে আমাকে বলে- তার নাকি মেয়রের সঙ্গে কথা হয়েছে এই রাস্তা ঠিক করে দেবে। তারপর তিনি এখানে বাড়ি করবেন।
আরেক প্রতিবেশী ইয়াসিন আলী মৃধা বলেন, মিয়া আরেফি পাবনা জেলা স্কুলে পড়তেন। ১৯৭৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি আগাগোড়াই একটু বেশি কথা বলেন। এ জন্য পরিবারের অন্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা ভালো না। তবে তার অন্য ভাই-বোনেরা অনেক ভালো মানুষ।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেয়ার পর মিয়া আরেফির বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। তবে পাবনার সঙ্গে তার তেমন কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। শুধু একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে তার কোনো আত্মীয়স্বজনও নেই। আগের কোনো অপরাধের তথ্যও পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে আরেফিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, আরেফি ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির বিষয়ে বিশেষভাবে অবগত ছিলেন না। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে ইশরাকও উপস্থিত ছিলেন। পরে আরেফিকে তারা জো বাইডেনের উপদেষ্টা ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানান। তখন তিনি শিখিয়ে দেয়া কথা বলেন।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।