বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
ঢাকা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি; সরকার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে রাজি আছে। আমরা সংবিধানের কাঠামোর মধ্য থেকে যে কোনো আলোচনায় রাজি আছি।
বুধবার (১ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। এর আগে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উল্লেখযোগ্য কোনো আলাপ হয়নি। তিনি বলেছেন, সংলাপ হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার। আমি বলেছি, আমরা সবসময় সংলাপকে স্বাগত জানাই। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত বলে আমরাও মনে করি। সংবিধান আমাদের যেভাবে কাঠামো করে দিয়েছে, সেটা অনুসারে সংলাপ করতে হবে। সারাহ কুকও এটা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনিও বলেছেন, সংলাপের বিকল্প নেই। সব অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার কথা তিনিও বলেছেন। এটা কোনো পরামর্শ নয়, এটা আমাদের মধ্যে আলাপচারিতা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলছেন, আমরা সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে করতে চাই। সংবিধান মাথায় রেখেই আমরা আলোচনা করতে চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই, সহিংসতা চাই না। তিনি আলাপ-আলোচনা করার জন্য সবসময় নির্দেশ দেন, যেন পরিস্থিতি শান্ত থাকে, সেটা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
সরকার সংলাপের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা আসবে, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। শর্তহীনভাব আসতে হবে। সংবিধানের কাঠামো মেনেই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সংবিধানের বাইরে যদি কেউ কিছু বলেন, তাহলে তো সেটি হবে না।।
আপনারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের (বিরোধীদের) তো আপনাদের ডাকতে হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই তো আসছেন। তাদের প্রয়োজনে আমাদের ফোন করছেন। তারা তো বলতে পারেন আমরা কথা বলতে চাই, আমরা হরতাল চাই না, এটা তো তারা বলেননি কোনোদিন। আমরা তো বলছি, দরজা তো বন্ধ হয়নি। আমরা যেকোনো আলোচনায় রাজি আছে, সেটি সংবিধানের কাঠামোর মধ্য থেকে।।
নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি বলেছে, তারা যাবে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটি তারা সবসময় বলে থাকে। ২০১৪ সালেও বলেছে। যে দলের প্রতি দেশের জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সেই দল নিশ্চিতভাবে নির্বাচনে এলে জয়লাভ করতে পারবে না। তারা সংলাপ চায় না, সহিংসতা চায়। সহিংসতা করে তারা একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায়। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ সহিংসতা চায় না।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যানবাহনের অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। যেখানে আগুন ধরাবে, সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যে দায়িত্ব ন্যস্ত আছে সেটা তারা পালন করবেন। এখানে কোনো ঘাটতি হবে না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ করে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।
তিনি বলেন, চোরাগুপ্তাভাবে বাসে আগুন ধরানো, এটা তাদের (বিএনপি) প্র্যাকটিস। এটা শুধু আজ নয়, অনেকদিন ধরে করছে তারা। আপনারা সেই দৃশ্যটা নিশ্চয়ই ভোলেননি- একজন রিটায়ার্ড কর্মকর্তার একমাত্র সম্বল বাস। তার বাসে যখন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, তখন তিনি তার স্ত্রীকে বলছে- ‘বউরে আমার সব শেষ। আমার আশা ভরসা শেষ।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই পর্যায়েই তো ওরা (বিএনপি)। সম্পদ নষ্ট করছে, মানুষের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। বাসের মধ্যে ঘুমন্ত হেলপার ছিল, তাকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। যেটা ২০১৪ সালে হয়েছে। সেটাই আবার তারা শুরু করেছে।
জাতিসংঘ সরকারকে সংযম প্রদর্শনের জন্য বলেছে- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ তাদের দায়িত্ব পালন করছে। যেন তারা (বিএনপি) ভায়োলেন্সে না যায়, তাদের তো এটা মানা উচিত। ভায়োলেন্সে তারা না গেলেই তো পারে, আমরা তো সংযম দেখাচ্ছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত অত্যাচারের পরেও ধৈর্য্য ধরেছে। একজন পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা করেছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের পুলিশ যেভাবে সংযম দেখিয়েছে এজন্য আমি গর্বিত। ভায়োলেন্স আমরা করছি না। জাতিসংঘ এটা বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেছে।
অবরোধের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব তো আপনারা নিজেরাই দেখছেন। গাড়ি-ঘোড়া চলছে। দোকানপাট খুলছে, অফিস -আদালত চলছে। বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটি বাসে আগুন ধরাচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।