ফাইল ছবি
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে ৩০১টি সুপারিশ করেছে বিশ্বের ১১০ দেশ। বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ‘ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)’ বা সর্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতির ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে প্রতিবেদনের খসড়া গৃহীত হয়েছে।
খসড়ায় অনেক দেশ থেকে একই বিষয়ে একই ধরনের সুপারিশ আসায় সংখ্যাটি এত বড় দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত সুপারিশের সংখ্যা কিছুটা কম হবে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এ পর্যালোচনাসভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিলেও সুপারিশমালা অনুমোদনের সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। জেনেভায় জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ সুফিউর রহমান আইনমন্ত্রীর পরিবর্তে সভায় বক্তব্য দেন।
বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুফিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এসব সুপারিশ পর্যালোচনা করে তার সিদ্ধান্ত আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় মানবাধিকার পরিষদের ৫৫তম অধিবেশনের আগেই জানিয়ে দেবে।
এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— বহুল আলোচিত গুমবিষয়ক সনদ ও নির্যাতনবিরোধী সনদের অতিরিক্ত চুক্তি অনুমোদন, গুমের ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগের স্বাধীন তদন্ত এবং দোষীদের বিচার ও সাজার ব্যবস্থা করা।
সুপারিশের মধ্যে আরও রয়েছে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলোপ ও সব ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে কারাদণ্ড দেয়া, সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংশোধন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সভা ও সংগঠনের অধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, মানবাধিকার রক্ষী, নাগরিক সমাজ বা এনজিও সদস্যদের হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ, নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধে আইন সংশোধন।
এ ছাড়া ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করা, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়ন, ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ঘোষণা, শ্রমিকদের আইএলও স্বীকৃত সব অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদিও রয়েছে সুপারিশে।
সোমবার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর পর্যালোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে তৃতীয় ইউপিআরে উঠে আসা ১৭৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। এর পর জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ দেশের মধ্যে ১১০ দেশ তাদের মূল্যায়ন ও সুপারিশ তুলে ধরে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোর পক্ষ থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নির্বাচন, শ্রম অধিকার, ভিন্নমত দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহি না থাকার বিষয়গুলোতে বেশি জোর দিতে দেখা গেছে।
সোমবার ইউপিআরের আওতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আনিসুল হক অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানবাধিকার পরিস্থিতি এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করেন।
বাংলাদেশের ইউপিআরের খসড়া প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব ছিল কিউবা, পাকিস্তান ও রোমানিয়ার ওপর। ওই ট্রয়কার পক্ষে অধিবেশনে বাংলাদেশের ইউপিআরের খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রোমানিয়ার প্রতিনিধি। খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে কোনো রাষ্ট্র আপত্তি না করায় তা গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন <> গাজায় ‘যুদ্ধবিরতি’র প্রস্তাব জাতিসংঘে পাস
এরপর জেনেভায় জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ সুফিউর রহমান ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের অধিবেশনে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইউপিআরে ১১০টি দেশ আলোচনায় অংশ নিয়ে মতামত দিয়েছে। এ ছাড়া ১২টি দেশ আগাম প্রশ্ন পাঠিয়ে পর্যালোচনায় সহযোগিতা করেছে। তিনি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সুফিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ তার প্রতিবেদনে মানবাধিকারকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আইনি ও বিধিবিষয়ক অগ্রগতিগুলো তুলে ধরেছে। ইউপিআরের প্রতি বাংলাদেশের জোরালো অঙ্গীকার আছে। সব সুপারিশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাংলাদেশ এ বিষয়ে ইউপিআরকে জানাবে।
গুম থেকে রক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ এবং নিষ্ঠুর শাস্তির বিরুদ্ধে সনদবিষয়ক ঐচ্ছিক প্রটোকল স্বাক্ষর করতে বাংলাদেশকে সুপারিশ করেছে স্পেন। স্লোভাকিয়া বাংলাদেশকে আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার সুপারিশ দিয়েছে।
বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের ভোট ও সরকার নির্বাচনের সামর্থ্যকে সুরক্ষা দেয়ার সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত, জবাবদিহি ও বিচার নিশ্চিত করারও সুপারিশ করেছে।
অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা বিলোপ করার সুপারিশ করেছে। নেদারল্যান্ডস ‘লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, কুইর, ইন্টারসেক্স ও অন্যদের (এলজিবিটিকিউআই প্লাস)’ জন্য দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাসহ এ সম্পর্কিত অন্যান্য আইন বিলোপ করার সুপারিশ করেছে। দেশটি সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতেও বাংলাদেশকে সুপারিশ করেছে। সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশকে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না দেয়ার নীতি অনুসরণ করার সুপারিশ করেছে।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।