Apan Desh | আপন দেশ

রাজধানীতে আতঙ্ক নিয়েই বেড়েছে যান চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ২০ নভেম্বর ২০২৩

রাজধানীতে আতঙ্ক নিয়েই বেড়েছে যান চলাচল

ছবি : সংগৃহীত

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাহারের দাবিতে সারাদেশে বিএনপির ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের শেষদিন সোমবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীতে বেড়েছে যান চলাচল। আতঙ্ক নিয়েই অনেকে কাজে বেড়িয়েছেন। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িও বেড়েছে। বেলা যত গড়াচ্ছে সড়কে বাড়ছে গণপরিবহনের সংখ্যাও।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কর্মজীবী মানুষ প্রতিদিনের মতোই নিজ গন্তব্যে ছুটে চলেছেন। ভোরের দিকে যানবাহন কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল বাড়ছে।

এদিকে যাত্রী সংকটের কারণে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস খুব একটা ছাড়েনি। বাস কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, হরতালের কারণে মানুষের ভেতরে ভয় বা আতঙ্কের কারণেই যাত্রী উপস্থিতি কম। একেবারে জরুরি প্রয়োজন না হলে কেউ দূরের গন্তব্যের জন্য কাউন্টারে আসছেন না।

অপরদিকে রাজধানীতে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। জনগণের যানমালের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা যাচ্ছে।সর্বশেষ আজ সারাদেশে ২৩১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। 

হরতালে গাড়ি চলাচল ও আতঙ্কের বিষয়ে কথা হয় অনেকের সঙ্গে। তারা জীবনের তাগিদে বাইরে বের হওয়ার কথা জানান। 

পল্টন মোড়ে বলাকা বাসের সুপারভাইজার আতিকুল ইসলাম বলেন, সকালের দিকে বিভিন্ন দল মিছিল করে। আগুন দেয়ার চেষ্টা করে। এ কারণে গাড়ি কম বের হয়। তবে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়লে গাড়ির সংখ্যাও বাড়বে।

কথা হয় একই বাসের যাত্রী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাসিবের সঙ্গে। তিনি মগবাজার হয়ে মতিঝিল যাচ্ছেন। হাসিব বলেন, গাড়ি আসছে কিন্তু উঠতে ভয় লাগে। টাকা কম লাগবে তাই ভয়ে ভয়ে গণপরিবহনের অপেক্ষায় থাকতে হয়। 

এদিকে সকালে বাস কম থাকায় অনেককে রিকশায় গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। তবে যাত্রীরা অভিযোগ করেন, নানা অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন রিকশাচালকরা। যদিও চালকরা দাবি করছেন, তাদের ভাড়া আগের মতোই রয়েছে।

মগবাজারে রিকশাচালক অলি মিয়া বলেন, ভাড়া আগের মতোই আছে। কেউ কেউ হয়তো পাঁচ-দশ টাকা বাড়তি নিচ্ছেন, কিন্তু সেটা খুব বেশি না। বাজারে আলু-পটলের দাম তো আরও বেড়েছে।

রিকশাযাত্রী মেহেরুন নেছা সিনথিয়া বলেন, মগবাজার রেলগেট থেকে মালিবাগ পার্টি হাউজে যাবো। ভাড়া ৪০ টাকা। এখন ৬০ টাকা চান চালক। পরে জোরাজুরি করে ৫০ টাকায় রাজি করিয়েছি।

ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালক শাওন খান প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, এখন রাস্তা ফাঁকা থাকায় মোটরসাইকেলে কম উঠছে মানুষ। এ কারণে ভাড়া তুলনামূলক কম।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় রাজধানীর কারওয়ানবাজার থেকে সোনারগাঁও মোড় ও সকাল সাড়ে ৭টায় দয়াগঞ্জ মোড়ে পিকেটিং করেন তারা।

আরও পড়ুন <> সারা দেশে ২৩১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

এ সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের আন্দোলন সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। সরকারের বিরুদ্ধে চারদিক থেকে অন্ধকার ধেয়ে আসছে। অবৈধ সরকারের মসনদ আর ধরে রাখতে পারবে না। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না। অচিরেই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।

এদিকে রোববার থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৬টি আগুন লাগার সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় ১৮টি যানবাহনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে তিনটি, ঢাকা বিভাগ একটি, রাজশাহী বিভাগে (নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ) সাতটি, চট্টগ্রাম বিভাগে (ফেনী, মিরসরাই, সাতকানিয়া) চারটি, ময়মনসিংহ বিভাগে (জামালপুর) একটি ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নয়টি বাস, একটি কাভার্ড ভ্যান, ৬টি ট্রাক, একটি সিএনজি, একটি ট্রেন (তিন বগি) পুড়ে যায়।

গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে হামলা, হত্যা, নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ২৯ অক্টোবর হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর মোট তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের শরিকরা। তারপর ৫ ও ৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় এবং ৮ ও ৯ নভেম্বর তৃতীয় দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করে তারা। ১২ ও ১৩ নভেম্বর চতুর্থ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পালন করা হয়। ১৪ নভেম্বর একদিনের বিরতি দিয়ে ১৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকা হয়। এরপর হরতাল ও পাঁচদফা অবরোধের পর আবারো টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। চলবে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত।

এসব কর্মসূচি চলাকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর গ্রেফতারের বাইরে থাকা নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়