ফাইল ছবি
রেল নেটওয়ার্ক আরও সম্প্রসারণ করে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়েকে দুটি (পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল) থেকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে বিদ্যমান চারটি বিভাগ থেকে বিস্তৃত করে আটটি বিভাগ করা হবে।
দুটি অঞ্চলের অধীনে বর্তমানে তিন হাজার ৯৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার রেলপথ আছে। রেলওয়ের বিদ্যমান মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে তা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় চার হাজার ৭০০ কিলোমিটার।
গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান কাঠামো বিভাজন সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান।
জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা নিয়ে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল গঠিত। এটিকে ভেঙে খুলনা ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের নতুন ‘দক্ষিণাঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। নতুন এ অঞ্চলের অধীনে পরিচালন বিভাগ হিসেবে যথাক্রমে যশোর ও ফরিদপুর করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে গঠিত বর্তমান পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ঢাকা ও ময়মনসিংহ আলাদা করে ‘মধ্যাঞ্চল’ নামে নতুন অঞ্চল গঠিত হবে। এ অঞ্চলের অধীনে পরিচালন বিভাগ থাকবে ময়মনসিংহ ও ঢাকা। এ সিদ্ধান্তের আলোকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে থেকে ঢাকা বিভাগ বাদ পড়ায় নতুন পরিচালন বিভাগ হিসেবে সিলেটকে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী ও রংপুর নিয়ে গঠিত রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের পরিচালন পরিধির এলাকা কমলেও বিদ্যমান পরিচালন বিভাগ পাকশী ও লালমনিরহাট অপরিবর্তিত থাকছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক নতুনভাবে প্রস্তাবিত বিভাগসমূহের অধিক্ষেত্র, জনবলসহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পার্সোনেল শাখার মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে দ্রুত প্রেরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী ২৩ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখে রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং জনগণের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান দুটি অঞ্চলকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করার অনুশাসন প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দুটি কমিটি গঠন করেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এ সংক্রান্ত সুপারিশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সভায় উত্থাপন করেন। এতে একটি কমিটি চারটি অঞ্চল ও পাঁচটি নতুন পরিচালন বিভাগ এবং আরেকটি কমিটি চারটি অঞ্চল ও আটটি পরিচালনা বিভাগে বিভক্তির প্রস্তাবনা দিয়েছিল।
আরও পড়ুন <> মুন্সীগঞ্জে আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৪
শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অঞ্চল ও বিভাগ বিভক্তির চূড়ান্ত প্রস্তাবনা দেয় গঠিত কমিটি। একইসঙ্গে জনবল কাঠামোতেও পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে রেলওয়েতে দুটি অঞ্চল ও চারটি বিভাগে ৪৭ হাজার ৬৩৭ অনুমোদিত জনবল আছে।
অঞ্চল ও বিভাগ বাড়ানোর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক সাত হাজার ৩০৯ জনবল বাড়িয়ে ৫৪ হাজার ৩৪৬ করার প্রস্তাব করেন।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, চার জন মহাব্যবস্থাপক নতুন চার চার অঞ্চলের প্রধান হবেন। আর তাদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন একজন করে বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক। ট্রেন পরিচালনাগত সিদ্ধান্তগুলো নেবে অঞ্চল ও বিভাগ। আর নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো দেখবে রেলের সদর দফতর তথা রেলভবন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবারের সভায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত জানান, খুলনা শহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের অনেক অব্যবহৃত ভূ-সম্পত্তি এবং স্থাপনা রয়েছে। মোংলা বন্দর খুলনার সন্নিকটে। এ ছাড়া খুলনা একটি প্রশাসনিক বিভাগীয় শহর। বর্ণিত বিষয়সমূহ উল্লেখপূর্বক তিনি খুলনা শহরে ‘দক্ষিণাঞ্চল’র সদর দপ্তর স্থাপনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
এসময় মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, রাজবাড়ীতে একটি ক্যারেজ ওয়ার্কশপ নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। ক্যারেজ ওয়ার্কশপ রাজবাড়ীতে স্থাপিত হওয়ার পর এ জেলার অন্তর্গত রেলওয়ের ভূ সম্পত্তি ও স্থাপনা সমূহের সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
রেলের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) ও প্রস্তাবনা কমিটির সদস্য অসীম কুমার তালুকদার জানান, তারা একটা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন ঢাকায়। এখন রেলওয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীসেবাসহ রেল নেটওয়ার্ক বাড়াতেই চার অঞ্চলে ভাগ করা হচ্ছে রেলওয়েকে। ট্রেন পরিচালনা ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবে এসব বিভাগ ও অঞ্চল। এর আলোকে রেলওয়ের জনবল কাঠামো পুনর্বিন্যাসের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।