Apan Desh | আপন দেশ

উত্তরে শীতের প্রকোপ, জনজীবন বিপর্যস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১২:০৬, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

উত্তরে শীতের প্রকোপ, জনজীবন বিপর্যস্ত

ছবি: সংগৃহীত

চার দিন পরেই পৌষ শুরু। হেমন্তের বিদায়লগ্নে এসে হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলে। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশার চাদরে কাবু এসব এলাকার মানুষ। চরাঞ্চলে অনুভূত হচ্ছে হিম বাতাস। লোকালয়ে হানা দিচ্ছে ঘন কুয়াশা। শীত আর কুয়াশায় বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ।

প্রায় সারা দেশে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারদিক। উত্তরের হিমেল বাতাসে রাতে বাড়ছে শীতের শিরশিরে অনুভূতি। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে এক বেলা। মাঝনদীতে আটকা পড়ছে ছোট-বড় ফেরি। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামে তীব্র শীতের দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সারা দেশে তাপমাত্রা কমতে পারে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এ ছাড়া সকালে রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশ ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাওয়ার আভাসও দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের আগে তেমন শীত দেখা যায়নি উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশের অধিকাংশ জায়গায়। তবে মিগজাউমের ফলে হওয়া বৃষ্টি কেটে যাওয়ার পরেই শীত জেঁকে বসেছে এসব এলাকায়। 

প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে থাকছে কুয়াশা। দিনের বেলা অনেকটা সময়ই জুড়েই আকাশ থাকছে মেঘাচ্ছন্ন। কমে এসেছে দিন ও রাতের তাপমাত্রা।

হঠাৎ এমন আবহাওয়া পরিবর্তনে দেখা দিচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগবালাই। শীতের কারণে বয়স্ক ও শিশুরা নিদারুণ দুর্ভোগে পড়েছে। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, সর্দি, কাশিসহ নানা রকম রোগ বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। নিতান্ত দরিদ্র মানুষেরা শীতের কাপড়ের সংকটে পড়েছেন। ঘন কুয়াশার কারণে গম, পেঁয়াজ, আলুসহ শীতকালীন নানা রকম ফসলে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এতে চাষিদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের এলাকাগুলোতে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে তাপমাত্রা। শীতবস্ত্রের অভাবে নিদারুন কষ্টে দিন কাটছে হতদরিদ্র মানুষের। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, শীতার্তদের সহায়তায় প্রস্তুতি আছে তাদের।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার মজুদ আছে। আমরা সর্বাত্মকভাবে শীতার্ত মানুষের পাছে আছি। সরকারের সবরকম প্রস্তুতি নেয়া আছে।

এদিকে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর বৃষ্টির মতো টিপটিপ করে ঝরা কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথগুলো। গাছের পাতা, ফসলের খেত আর ঘাসের ওপর থেকে ঝরছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালবেলা সড়কের যানবাহনগুলো চলেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ঘন কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছে কাজের সন্ধানে। বেলা ১১টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের।

এর মধ্যে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) নওগাঁর বদলগাছীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১  দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। নওগাঁ বদলগাছি আবহাওয়া অধিদফতরের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, আগের দিনের তুলনায় আজ তাপমাত্রা দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। রোববার বদলগাছীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরও পড়ুন <> ফিলিং স্টেশনে বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও একজনের মৃত্যু

অপরদিকে লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় জানান, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত নিউমোনিয়া আক্রান্ত বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছেন। লালমনিরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ শীতজনিত রোগীদের সেবা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা এক-তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকায় পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৮-১২ কিলোমিটার।

রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনেই তাপমাত্রা কমেছে প্রায় চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুরে এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে সাড়ে চার ডিগ্রি। সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া।

এদিকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই উত্তরাঞ্চলে শৈতপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। দুই-এক দিনের মধ্যেই আরও হ্রাস পেতে পারে রাতের তাপমাত্রাও।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়