প্রতীকী ছবি
সাত জানুয়ারির ভোট গ্রহণ। ভোটারদের উপস্থিতি কতো শতাংশ হবে তা আন্দাজ করা কঠিন। তবে নৌকা যে সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পাচ্ছে। সেটা বলতে যদি শব্দ যোগের প্রয়োজন নেই।
ভোটের আয়োজক নির্বাচন কমিশনের একাধিকজন ভোটের আগে-পরের চিত্র আগাম দিচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা শঙ্কার বার্তা। ইসি আনিছুর রহমান ইতোমধ্যে অর্ধডজন মিটিংয়ে নির্বাচন কমিশনার খোলাখুলিই বলেছেন। তার ভাষ্য, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে না পারলে বিশ্ব থেকে দেশ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। হবু এমপিদের তিনি বলছেন, যেনতেন ভাবে এমপি হতে পারবেন কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাতে শুধু আপনিই নয় দেশ বিপদে পড়বে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন অনেক আগেই বলেছেন, এবারের নির্বাচনে যারা অংশ নেবে তাদের আম-ছালা দুটোই যাবে।
বর্তমান সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি যে পুরোপুরি ইতিবাচক নয়, তা তাদের বেশ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছুদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধা দিতে চাওয়া ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আনার ঘোষণাও দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। তফশিল ঘোষণার আগেই এমন বার্তা দেয়া আছে।
এদিকে রাতারাতি দল পাল্টানো সাবেক সেনাকর্মকর্তা শাহজাহান ওমন আরেকধাপ এগিয়ে বলেছেন। ধানের শীষ ছেড়ে তার প্রতীক এবার নৌকা। ভরাজনসভায় এই ব্যারিস্টার বলেছেন, নির্বাচনে ৭০/৮০ শতাংশ ভোট দেখাতে না পারলে স্যাংশন আসবে।
স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা দেবে পশ্চিমারা। কেনো দেবে? কথাটি নির্বাচনের আগে দফায় দফায় বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র। এই স্যাংশনের শর্তে যে শুধু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট তা নয়। যোগ হয়েছে পোশাক শ্রমিকদের মুজুরী, নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পাচারসহ বিভিন্ন ইস্যু যা ইতোমধ্যে ঘটে গেছে।
ওদিকে আন্দোলন করে সরকারকে কাবু করতে পারেনি বিরোধীরা। ক্ষমতাসীনদের কৌশলের কাছে বিরোধীদের কৌশল ধোপে টেকেনি।উল্টো কৌশল প্রণেতা থেকে শুরু করে কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী-সবাই এখন খাঁচায়বন্দি। ঘরবাড়ী ছাড়া। মাঠের বাইরে। টিকে থাকার অবলম্বন হিসাবে বদল করেছে আন্দোলনের ধরন। তারা নেমেছে ভোটের উপস্থিতি কমাতে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্র বিমুখ করাই এখন মূল টার্গেট।
ভোট প্রার্থনা ছাড়া অন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। তাই বিরোধীরা মুখে কথা বিলি করছে কাগজে লিখে। আর তুমুল ঝড় তুলছে ফেসবুকে।বিরোধীদের কথায় কতো শতাংশ ভোটার ঘরে বসে থাকবে তা দেখার জন্য আরমাত্র তিনদিন অপেক্ষর করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন, নৌকার প্রার্থী, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে স্যাংশন। তবে কেউ বলছে আসছে, কেউ বলছে আসতে পারে। ভোটের শেষ সময়ে চায়ের কাপে প্রার্থী নির্বাচনের বদলে গুরুত্ব পাচ্ছে স্যাংশন। এছাড়া দ্রব্যমূল্য, ডলার সংকট, রিজার্ভ সংকট, বেকারত্ব, নির্বাচনের পরেও বিরোধী দলের আন্দোলন ইত্যাদি তো থাকছেই।
রাষ্ট্রের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধাপে ধাপে অনেক বার্তা দিয়েছেন। দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক’মাস আগে থেবেই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। হালে বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে চক্রান্ত চলছে। তারা মার্চের মধ্যে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাতে চায়। তবে তাদের চিন্তা মাথাতেই থাকবে।
নির্বাচনের পর যে সংকট সৃষ্টি হবে তা এখন আর নতুন বলার নেই।সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে মোমেনের কথাতেই তা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পর যে সঙ্কট তৈরী হবে তা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি সরকারের আছে।
সব মিলিয়ে ক্ষমতাসীনদের জন্য ভোটগ্রহণ যতোটা না চ্যালেঞ্জের তার চেয়ে বেশি নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।