Apan Desh | আপন দেশ

কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভোটাররা

সৈয়দ মুহাম্মদ আজম

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৫ জানুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ২২:১৯, ৫ জানুয়ারি ২০২৪

কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভোটাররা

প্রতীকী ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘদিন ধরে প্রার্থিরা ভোট চেয়ে আসছেন। প্রচারণা শেষ। বিজয়টা কারো নিশ্চিত। আবার কেউ হিসাব কষছেন জয়-পরাজয়ের। অন্যদিকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আসছে সরকারবিরোধীরা। নির্বাচন ঠেকাতে চালাচ্ছে হরতাল কর্মসূচি।

ওদিকে, উন্নয়ন সহযোগীরাও নির্বাচন চায়। তবে তা ভীতিমুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। তিনপক্ষের আহ্বান বিবেচনায় রেখে ভোটারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাকি সময় সিদ্ধান্ত নেয়ার। 

অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন বৈধ আর বর্জন করলে অবৈধ। কী করবে ভোটার? আজ সিদ্ধান্ত নেয়ার দিন। রোববার ভোট।

ভোটপ্রদান
নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৮টি দল। তবে সবগুলো দল ভোটে না আসায় অস্বস্তি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোটাধিকার প্রয়োগে উৎসাহিত করছে কমিশন। পাশপাশি সরকার দলগুলো সামাজিক মাধ্যমসহ নানাভাবে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে আসছে ইসি ও সরকারদল।

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে না পারে সেজন্য দেয়া হয়েছে ডামি প্রার্থী। একই সঙ্গে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেও দলীয় প্রার্থী, নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। দলীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষিত প্রত্যেক কর্মীকে ২০০ জন ভোটার কেন্দ্রে নিতে হবে।

ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্বে থাকছে আওয়ামী লীগের আড়াই লাখ প্রশিক্ষিত কর্মী। এর মধ্যে ২ লাখ ২ হাজার ৫৮০ জন ভোট ‘প্রার্থনা’ কর্মী তৈরি হয়েছে। ভোট প্রার্থনা কর্মী বা প্রচারকর্মী তৈরি করতে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে ‘অফলাইন ক্যাম্পেইন’ নামে একটি কর্মসূচি নেয়া হয়। এর আওতায় সারাদেশে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন বাস্তবে প্রয়োগের পালা। প্রার্থিরাও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। 

ভোট বর্জন
দীর্ঘদিন ধরেই সরকার বিরোধী আন্দোল করে আসছিল রাজনৈতিক দলগুলো। তবে সে আন্দোলনে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব থাকায় রাজনীতির মাঠে সুবিধা করে উঠতে পারেনি। দূরত্ব ঘুচিয়ে একমঞ্চে অবস্থান নেয় তারা। শুরু হয় যুগপৎ আন্দোলন। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দফায় দফায় কর্মসূচি দেয় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। সে আন্দোলনেও সুবিধা করতে না পেরে অসহযোগের ঘোষণা দেয় বিএনপি। 

তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আসছে বিরোধীরা। জনমত গঠনে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে তারা। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এ নির্বাচনকে ‘জনগণের সঙ্গে তামাশ’ ও ‘ফাওতাবাজির নির্বাচন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগ ২০১৪ ও ১৮ সালের মতো পুনরায় কারচুপি করে আবারও ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। এটা নির্বাচন নয়, ক্ষমতার নবায়ন।

তবে বিরোধীদের ভোট বর্জনের আহ্বান সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ইসি ও সরকার দল। সব মিলিয়ে নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অনেকটাই সংশয় বাধিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ঠেকাতে পারলেই নিজেদের আন্দোলন সফল বলে ধরে নেবেন তারা। 

বর্হিবিশ্বের পর্যবেক্ষণ
বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক মহল। বিরোধীদের নানা অভিযোগ, সরকারের সঙ্গে আপোষহীনতা অনেকটাই দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার পূর্বাভাস দিয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিক্রমায় শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। ফলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। 

নির্বাচন বিদেশের বৈধতা না পেলে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দুর্ভিক্ষ আসবে বলেও শংকা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এর মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে সর্তক করেছে আন্তর্জাতিক মহল। নির্বাচনের ঠিক দু’দিন আগে মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বানে ‘১০ দফা মানবাধিকার সনদ’ ঘোষণা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যা অনেকটাই সরকারপক্ষকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো। এখন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূরক হওয়ার ওপর নির্ভর করছে বর্হিবিশ্বে প্রতিক্রিয়া। তবে শংকা যে আরও গাঢ় হচ্ছে সে বিষয়ে একমত বিশ্বেষকরা।

আরও পড়ুন>> বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষায় অ্যামনেস্টির ১০ দফা

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনটাই দাবি বাহিনীগুলোর সদর দফতরের। ভোটকেন্দ্র ও ব্যালটের নিরাপত্ত দিতে সারাদেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৪৩ জন সদস্য মোতায়েন করেছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। অন্যদিকে গত বুধবার থেকে দেশের ৬২ জেলায় মাঠে নামছে সেনাবাহিনী। 

২৯ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ মোট পাঁচ দিন ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনের তিন দিন আগে তারা মাঠে নামবে এবং নির্বাচনের দুই দিন পর পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবে। সারা দেশে পুলিশ বাহিনীতে সদস্য আছে ২ লাখ ১২ হাজার।

র‌্যাব সদর দফতরে ১৫টি টহল দল সেন্ট্রাল রিজার্ভ হিসেবে প্রস্তুত থাকবে। দেশব্যাপী ২৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। অন্যান্য স্থানে মোতায়েনের জন্য ৫০টি টহল দল প্রস্তুতসহ দেশব্যাপী সর্বমোট ৭০০টির অধিক টহল দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। সদর দপ্তরের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ৭টি জোনে বিভক্ত হয়ে মোতায়েনের জন্য সর্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। ডগ স্কোয়াডের ১০টি দল সর্বক্ষণিক প্রস্তৃত থাকবে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়