বঙ্গভবন, ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো এবং টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন আজ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি)। তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ বিষয়ে বুধবার (১০ জানুয়ারি) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও আজ শপথ নেবেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে দল ও সরকার পরিচালনায় অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে টানা চতুর্থ এবং পঞ্চমবারের মতো জয়ী করে অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন তিনি। বিশ্বে কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনন্য নজির ও গৌরবের মুকুটের অধিকারি হবেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ-সদস্য শেখ হাসিনা-কে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন এবং তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের গাড়ি হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত করেছে সরকারি যানবাহন অধিদফতর। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। তাদের মধ্যে ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী। আর ১১ জন পাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন।
এবার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন ৩৬ জন। পূর্ণ মন্ত্রীর তালিকায় রয়েছেন, আ. ক. ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, আসাদুজ্জামান খান, ডা. দীপু মনি, মো. তাজুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুখ খান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আনিসুল হক, হাছান মাহমুদ, আবদুস শহীদ, সাধন চন্দ্র মজুমদার, র আ ম ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, আব্দুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আবদুস সালাম, মহিবুল হাসান চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন, ফরিদুল হক খান, জিল্লুল হাকিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নাজমুল হাসান পাপন, ইয়াফেস ওসমান ও ডা. সামন্ত লাল সেন।
প্রতিমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছেন, বেগম সিমিন হোসেন রিমি, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, মো. আলী আরাফাত, মহিবুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাহিদ ফারুক, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রুমানা আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আহসানুল ইসলাম।
এর আগে বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের অনুমতি চেয়ে দলের পত্র রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। রাষ্ট্রপতি এ সময় তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ব্রিফিংয়ে জানান, সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপ্রধান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ বিজয় জনমতেরই প্রতিফলন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষে রায় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন রাষ্ট্রপতি। সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
আরও পড়ুন <> শেখ হাসিনা সংসদ নেতা, উপনেতা মতিয়া চৌধুরী
এর আগে বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীও রাষ্ট্রপ্রধান ও তার পত্নীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন। মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিবসহ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণও উপস্থিত ছিলেন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শেখ হাসিনার এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সর্বশেষ বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন তিনি। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ তিনিই পড়াবেন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এখন পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের একজন করে মোট দুজন জয়ী হয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোট করেন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পর এবার সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে সংসদের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটি ১১টি আসন পেয়েছে। আর ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ১৯৯৬ সালে। ওই বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২০০১ সালে মেয়াদ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় বিএনপির কাছে।
পরে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে জটিলতা সৃষ্টি করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এ নির্বাচনের পর ওই বছরের ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।