ছবি : সংগৃহীত
দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঘের কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশায় দুপুর পর্যন্ত দেখা মিলছে না সূর্যের। অনেক স্থানে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বেশি কষ্টে আছেন শ্রমজীবী মানুষ। এদিকে কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। আলু খেতে দেখা দিয়েছে মড়ক রোগ। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা।
এদিকে দেশের একাধিক জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে। বন্ধ রয়েছে শিক্ষপ্রতিষ্ঠান। নতুন করে অনেক জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার ঘোষণা আসছে।
রাজধানীতে এ শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রায় সব জেলাসহ মোট ২১ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ।
আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে, আট দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার (২১ জানুয়ারি) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল একযোগে তিন স্থানে। সেই স্থানগুলো হলো— রাজশাহী, ঈশ্বরদী ও বদলগাছী। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত দুই দিন রাজধানীর বাইরে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ভোরে ও রাতে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যে ছয়টি জেলায় শীতের অনুভূতি বেশি ছিল। উত্তরের পাঁচ জেলাসহ দেশের মোট ছয় জেলায় রোববার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আজ সোমবার তা উত্তরের আরও কিছু জেলায় ছড়াতে পারে। সব মিলিয়ে আজ দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শীতের অনুভূতি কিছুটা বাড়তে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে মাসের বাকি দিনগুলোতে পুরো দেশে শীতের অনুভূতিতে বড় কোনো তারতম্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যে কারণে এই ছয় জেলায় শীতের তীব্রতা অন্য এলাকার চেয়ে বেশি।
কোনো অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে তিনটি স্থানে— রাজশাহী, পাবনার ঈশ্বরদী ও নওগাঁর বদলগাছীতে। প্রতিটি এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাটেও। সেখানকার তাপমাত্রা ছিল নয় দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের নিকলী এবং পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, মৌলভীবাজার, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলায়। এসব অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রোববার ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল। আর ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তাপমাত্রা। এর মধ্যে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন <> শীত নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অধিদফতর
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, চলতি জানুয়ারি মাসের বাকি সময় দেশের কোনো না কোনো এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ থাকবে। হয়তো কোনো অঞ্চলে নতুন করে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেবে, আবার কোনো অঞ্চল থেকে শৈত্যপ্রবাহ সরে যাবে— এভাবেই চলবে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আজ সোমবার সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। ফলে রাতে শীতের অনুভূতি বেশি হবে। এ ছাড়া আজ মধ্যরাত থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা থাকতে পারে। কোনো অঞ্চলে ঘন কুয়াশা থাকলে সূর্যের তাপ কমে সেখানে শীতের অনুভূতি বেড়ে যায় বলে জানান আবহাওয়াবিদেরা।
তীব্র শীতের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হচ্ছে। রোববার জয়পুরহাট জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। আজও এই জেলার বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান হবে না। জয়পুরহাটের মতোই রাজশাহী, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম জেলার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রোববার বন্ধ ছিল। আজও এসব জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
অন্যদিকে পাবনা ও নাটোর জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সোমবার পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার রাতে পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রাজা ও নাটোর জেলা শিক্ষা অফিসার শাহাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, সোমবার ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এই শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ নগরীর।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।