ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) শীতের প্রকোপ আরও বেড়েছে। আজ চলতি মৌসুমে রাজধানী এবং সেই সঙ্গে দেশেরও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড হলো। রাজধানীতে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয়েছে ১১ দশমিকি এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর পাশাপাশি মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও সিরাজগঞ্জে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যেক্ষণাগার কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। এর তিন ঘণ্টা যেতেই সকাল ৯টায় তাপমাত্রা কমে ছয় দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে ৯৭ শতাংশে দাঁড়ায়।
প্রচণ্ড শীতে সারাদেশেই জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মিলেছে। তবু শীতের তীব্রতার হেরফের হয়নি। শীতের তীব্রতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নবিত্তরা। তাদের আয়-রোজগারে ভাটা পড়ছে।
এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগব্যাধি। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু ও প্রবীণ। হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যার তুলনায় রোগীর চাপ বেশি। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তীব্র এই শীতে নদীতীরবর্তী ও চরাঞ্চলে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেখানে অনেককেই আগুন পোহাতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বেলে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আজ ঢাকাসহ দেশের চার বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।আগামীকাল বুধবারও (২৪ জানুয়ারি) দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আজ ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকার স্টেশনের তাপমাত্রা ১১ দশমিক এক হলেও স্থানগুলোর তাপমাত্রা ১০-এর নিচে। তাই এখানে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চার বিভাগ ছাড়াও মৌলভীবাজার, ভোলা, চট্টগ্রাম জেলাতেও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আগামীকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। তবে তা মাঝারি না হয়ে মৃদু হতে পারে।
আরও পড়ুন <> মাঘের কনকনে ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। তবে জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীত বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) দেশের ২১ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজই প্রথম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এদিকে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল- নওগাঁর বদলগাছী ও দিনাজপুরে। এই দুই জায়গাতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল আট দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার আট দশমিক দুই থেকে নয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা (সর্বনিম্ন) ছিল টাঙ্গাইল; নীলফামারীর সৈয়দপুর ও ডিমলা এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নয় থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জের নিকলী, রাজশাহী, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়া, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, আগামীকাল বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। এর বাইরে দেশের অন্য অঞ্চলের আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। তিনি জানান, বৃষ্টির সময় শীতের তীব্রতা কমে আসবে। তবে বৃষ্টি ও মেঘ কেটে গেলে শীতের তীব্রতা আবার বাড়বে।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নামলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নামলে তা হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আর চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।