শনিবার মিয়ানমার থেকে পাঁচ রোহিঙ্গা একটি নৌকায় করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাটে পৌঁছান, ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে জাতিসংঘ। কিন্তু বাংলাদেশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়।
গত বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় এমন আলোচনা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি মাসের শুরু থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়তে থাকে। দুই দেশের সীমান্ত এলাকা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে ওপারের গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। লড়াইয়ের মুখে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গারা নিজেদের আদি নিবাস ছেড়ে রাজ্যের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল পাঁচটার দিকে নাফ নদী হয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে একটি নৌকা ঢুকে পড়ে বলে জানা গেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, নৌকায় পাঁচজন রোহিঙ্গা আছে। তাদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ৯ নম্বর ওর্য়াডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আব্দুস সালাম জানান, নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বিকালে একটি ডিঙি নৌকায় মিয়ানমার থেকে পাঁচ রোহিঙ্গা এসে আমাদের জেটিঘাটে পৌঁছায়। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) খবর দিলে ঘটনাস্থলে তারা পৌঁছান।
জেটিঘাটের ঝুপড়ি দোকানদার মো. সেলিম জানান, মিয়ানমারের একটি ডিঙি নৌকা শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে এসে পৌঁছায়। এদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ নারীসহ পাঁচ জন রোহিঙ্গা আছে।
আরও পড়ুন <> প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধ বন্ধের উপায় খোঁজার আহ্বান
টেকনাফ থানার পরিদর্শক ওসমান গণি বলেন, মিয়ানমারের ওপার থেকে নাফ নদী পার হয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে ছোট ডিঙি নৌকা করে পাঁচ জন রোহিঙ্গা চলে এসেছে। একজন গুলিবিদ্ধ নারী রয়েছে শুনেছি।
এদিকে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি সরকারের অবস্থান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন। কারণ, এই মুহূর্তে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য নানাভাবে সংকট তৈরি করেছে। ফলে নতুন করে আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার সুযোগ বাংলাদেশের নেই।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। ৫ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে সীমান্তের ওপার থেকে আসা মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে ইতোমধ্যে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ দেশটির ৩৩০ জন বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে সেনা অভিযানের মুখে রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।