ভিডিও থেকে নেয়া ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা চাই, আমাদের দেশ এগিয়ে যাক, এটিই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের নির্বাচন সবচেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।
রোববার (৩ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনটি শুরু হয়, যা শেষ হবে আগামী বুধবার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন টেকসই হয় না, এটিই প্রমাণিত সত্য। দলমত নির্বিশেষে মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজার পরিস্থিতিরি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রমজান আসলে কিছু ব্যবসায়ী মজুত করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা নিতে চায়। কোথাও যাতে ভোক্তাদের হয়রানিতে পড়তে না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিদেশনির্ভর না হয়ে নিজেদের উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। খাদ্যে ভেজাল দেয়ার বিষয়টিও দেখতে হবে। রোজা আসলে এটি বেড়ে যায়।
কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এখন সবেচেয়ে বড় কিছু সমস্যা আছে। এখন কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দেখি। পড়ালেখা করা ছেলে-মেয়েরা কেন এসবে জড়াবে? এটি সবার দেখতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকসহ সবাইকে নজরদারি বাড়াতে হবে। ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় কিনা, নজরদারি বাড়াতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। (কিশোরদের) গ্রেফতার করে লাভ নেই। গ্রেফতার করলে অপরাধীদের সঙ্গে মিশে আরও খারাপ হয়ে যাবে। গোড়া থেকে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
নির্বাচনে যথাযথ দায়িত্ব পালন করায় জেলা প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের পর থেকে যতগুলো ভোট দেখেছি, এবারের নির্বাচন সব থেকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যারা নির্বাচন চায়নি, তাদের কাছে নির্বাচন হয়তো পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেশি ছিল। বিশেষ করে নারী ও তরুণ ভোটাররা; তারা যে অংশ নিতে পেরেছে নির্বাচনে, এর ক্রেডিট আপনাদের (ডিসি)। এজন্য আপনাদের আবারও ধন্যবাদ জানাই।
আরও পড়ুন <> রাষ্ট্রপতি লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সূচনা বক্তব্যে শুরু হওয়া সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
এর আগে চার দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২৩ সালে এই সম্মেলন তিন দিন হলেও এবার ৩ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয় ও সংস্থা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রায় ৩৫০টি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা।
গত বছর এই প্রস্তাবের সংখ্যা ছিল ২৪৫টি। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার একশর বেশি প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। প্রতিবছর বেশির ভাগ প্রস্তাব থাকে ডিসি ও ইউএনওদের ক্ষমতা বা দায়িত্বের পরিধি বাড়ানো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসংক্রান্ত। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি।
এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন ও পরামর্শ দেবেন। এ জন্য সম্মেলনের প্রথম দিন রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘উন্নয়নে মাঠ প্রশাসন’ শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন শনিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিবরা সম্মেলনে অংশ নেবেন। চার দিনে স্পিকার, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জেলা প্রশাসকরা সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্দেশনা গ্রহণ ও মতবিনিময় করবেন।
এ ছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও সামরিক-বেসামরিক সমন্বয়বিষয়ক অধিবেশন সংযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, একটি স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় এবং একটি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নির্দেশনা গ্রহণ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা দুটি।
গত বছর তিন দিন সম্মেলন হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে তিন দিনে সকল আলোচনা সম্ভব হয় না, সেজন্য এবার চার দিনব্যাপী সম্মেলন হবে। এই চার দিনে প্রধান বিচারপতি ও স্পিকারের সঙ্গে অধিবেশন থাকবে। তবে রাষ্ট্রপতি দেশে না থাকায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে না। প্রতিবছর জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়। এবারো প্রস্তাব আসছে। সব মিলিয়ে সম্মেলনে এবার ৩৫৬টি আলোচ্য বিষয় থাকছে।
প্রধান আলোচ্য বিষয়ে থাকছে, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।