Apan Desh | আপন দেশ

জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ 

অভিযান না চালাতে নাবিকদের চাপ দিচ্ছে দস্যুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২০ মার্চ ২০২৪

অভিযান না চালাতে নাবিকদের চাপ দিচ্ছে দস্যুরা

ফাইল ছবি

জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারে সোমালি পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও নাবিকদের জীবন শঙ্কা হবে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না জাহাজটির মালিকপক্ষ। অভিযান বন্ধে জাহাজটির নাবিকদের চাপ দিচ্ছে জলদস্যুরাও। 

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সোমালি পুলিশের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ডের জলদস্যু অধ্যুষিত আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পুলিশ বাহিনী জানায়, এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে তারা প্রস্তুত রয়েছে।

এক বিবৃতিতে পুলিশ বাহিনী জানায়, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের পরিকল্পনা করছে এমন তথ্য পেয়ে পুন্টল্যান্ডের পুলিশ বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

এদিকে দেশের সিনিয়র নাবিক ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান জানান, গত দুদিন আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী এমভি আবদুল্লাহকে বেশ চাপের মুখে রেখেছে। যুদ্ধজাহাজগুলো এমভি আবদুল্লাহর দেড় মাইলের মধ্যে অবস্থান নিয়েছে। ফলে জলদস্যুরা জাহাজের নোঙর তুলে আরও ভেতরে চলে গিয়ে তীরের মাত্র দেড় মাইল দূরে নোঙর করেছে। জলদস্যুরা এটিও বলেছে যে, বাড়াবাড়ি করলে জাহাজ তীরে তুলে দেবে। তবে দুই নৌবাহিনী এখনো বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।

ক্যাপ্টেন আতিক জানান, নৌবাহিনীর চাপে নাবিকদের এখন ২৪ ঘণ্টাই জাহাজের ব্রিজে অবস্থান করতে হচ্ছে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে ভিএইচএফ (ওয়াকি টকি) ব্যবহার করে নৌবাহিনীকে অনুরোধও জানাতে হচ্ছে যেন কাছে না আসে।

আরও পড়ুন <> গাজায় খাদ্য সংকটে তীব্র হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি

অপরদিকে, এমভি আবদুল্লাহর মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের মূল সংস্থা কেএসআরএমের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাহাজটিতে অভিযান চালানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন।

তিনি বলেন, ক্রুদের জীবন বিপন্ন হতে পারে, এমন কোনো সামরিক পদক্ষেপকে আমাদের কোম্পানি সমর্থন করে না। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ সরকারও সংশ্লিষ্ট নৌবাহিনীকে জোরপূর্বক অভিযান না চালানোর জন্য জোরালো অনুরোধ জানিয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকট সমাধান করতে চাই।

কেএসআরএমের মুখপাত্র ও গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন নাবিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে আমরা কোনো অভিযান পরিচালনার বিপক্ষে। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছি সরকারকে। সরকারও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আমাদের মতামত পৌঁছে দিয়েছে। তারপরও আন্তর্জাতিক কোনো নৌবাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে তার দায়-দায়িত্বও তাদের নিতে হবে। আমরা ২৩ নাবিকের সবাইকে নিরাপদে ও সুস্থ দেহে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই।

নাবিকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই সংগঠনের সভাপতি আনাম চৌধুরী নিজেও জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি বলেন, বিশ্ববাণিজ্যের নৌ-রুট নিরাপদ রাখার অধিকার আন্তর্জাতিক সংস্থার রয়েছে। তারা চাইলে অভিযানও পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু অভিযান পরিচালনা নিয়ে বিধিনিষেধ আছে। এই মুহূর্তে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি আছে সোমালিয়ার উপকূল থেকে চার নটিক্যাল মাইল দূরে। সেখানে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট জাহাজের মালিক ও দেশের অনুমতি লাগবে। অনুমতি উপেক্ষা করে অভিযান পরিচালনা করলে সেটির দায়-দায়িত্ব নিতে হবে সামরিক নৌবাহিনীকে। তবে উপকূল থেকে ২৪ নটিকেল মাইল দূরে গিয়ে চাইলে নিরাপত্তা জোরদার করতে পারে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী।

১২ মার্চ ভারত মহাসাগর  থেকে বাংলাদেশি জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজটি এখন সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূলের কাছে নোঙর করা আছে। জাহাজটিতে জলদস্যুরা ওঠার পরপরই একটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি দূরপাল্লার টহল জাহাজ মোতায়েন করেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী। বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নেয়া পর্যন্ত তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নিয়ে অনুসরণ করেছিল ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ। এর মধ্যে শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে মাল্টার পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধার করেন। 

আপন দেশ/এমআর 

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়