ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে পড়ে নিহত পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন একই পরিবারের সদস্য। তারা হলেন বেলাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৬) ও তাদের চার বছরের সন্তান মাইশা (৪)। নিহত মুক্তা বেগম ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
অন্য দুজন হলেন রবিউল (১৯) ও রিপন হাওলাদার (৩৮)। রিপন হাওলাদারের বাড়ি পটুয়াখালী। তিনি রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় থাকতেন। আর রবিউলের বাড়ি ঠাকুরগাঁও।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের সিনিয়র অফিসার আনোয়ার হোসেন দোলন জানান, সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে তাসরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামে দুটি লঞ্চ দড়ি দিয়ে পন্টুনে বাঁধা ছিল। লঞ্চ দুটির মাঝখান দিয়ে এমভি ফারহান-৬ নামে আরেকটি লঞ্চ প্রবেশ করে ভোলাগামী তাসরিফ-৪ লঞ্চকে ধাক্কা দেয়। এতে তাসরিফ-৪ লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে যায়। এতে অন্য একটি লঞ্চে যাত্রীরা ওঠার সময় তারা নিচে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর পাঁচ জনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নিহত বেলাল তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুক্তা ও তাদের চার বছর বয়সী মেয়ে মাইশাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী যাচ্ছিলেন। কিন্তু এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তারা বাড়িতে ফিরবেন ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।
মুক্তার ভাই মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেলাল তার পরিবার নিয়ে গাজীপুরের বোর্ড বাজারের বড় বাড়ি এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তিনি একটি গার্মেন্টেস চাকরি করতেন। তার স্ত্রী মুক্তা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাকে পিরোজপুরের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য সপরিবার সদরঘাট যান। লঞ্চে ওঠার সময় তারা এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের পরিবারের আর কেউ বেঁচে থাকলো না।
নিহত রবিউল হাওলাদার (১৯) ইস্পাহানি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। একই সঙ্গে একটি টেইলার্স দোকানে কাজ করতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের নিশ্চিতপুরে।
রবিউল হাওলাদারের মা নুরুন্নাহার বলেন, আমার ছেলে সদরঘাটে একজনকে তুলে দিতে গেছিলো। ওই সময় লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে পড়ে আঘাতে মারা যায়।
নিহত রিপন (৩৭) ঢাকার নতুন বাজারের ১০০ ফিট খন্দকার বাড়ি এলাকায় থাকতেন। তার বাড়ি বরিশালের পটুয়াখালী শিয়ালদীতে। তিনি ঢাকায় মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং করতেন।
রিপনের বেয়াই শহিদুল ইসলাম বলেন, রিপন গ্রামের বাড়ি যাওয়া উদ্দেশ্যে সদরঘাটে গিয়েছিলেন। তার দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জেলা উপসহকারী পরিচালক ফয়সালুর রহমান বলেন, এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের ধাক্কায় তাসরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে ঘাটে থাকা পাঁচ যাত্রীকে গুরুতর আঘাত করে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠাই। পরে সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বিআইডাব্লিউটিএর ঢাকা জেলা পরিচালক এ কে এম আরিফুদ্দিন বলেন, ঈদ সামনে রেখে লঞ্চ মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া ও বেআইনি তৎপরতার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর দায় তাদেরই নিতে হবে।
নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত বলেন, এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।