ছবি: সংগৃহীত
দেশের সমুদ্র অঞ্চলে কোনো রাডার নেই আবহাওয়া অধিদফতরের। পূর্বাভাসের জন্য নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, পার্শ্ববর্তী দেশের রাডার ও অন্যান্য ব্যবস্থার উপর। গত কযেক বছরে হওয়া ঝূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসেও পরনির্ভরতায় কাটছে আবহাওয়া অফিসের। দেশে এখন সক্রিয় আছে একটি রাডার। আর আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরেকটি চালু হবে।
রাজধানীতে অবস্থিত জে-বার্ডস নামের এ রাডারটি চতুর্দিকে ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এর চেয়ে বেশি দূরত্বে রাডারটি কাজ করে না। ফলে সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সময় সংকেত পেতে অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হয় আবহাওয়া অধিদফতরকে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ ও সমুদ্র তীরবর্তী দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে আরও চারটি রাডার প্রয়োজন। একটি দরকার রংপুর, একটি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার এবং অপর দুটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও কক্সবাজারে। রংপুরে রাডার থাকলে সেটি কালবৈশাখীর মতো ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে পারত। সিলেটের রাডার বসলে এর মাধ্যমে আকস্মিক বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। আর কক্সবাজার ও খেপুপাড়ার রাডার দিয়ে সমুদ্রে সৃষ্ট যেকোনো ঝড়ের নির্ভুল পূর্বাভাস পেতে পারে অধিদফতর।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ চার জায়গায় আগে রাডার ছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেগুলো আর পুনঃস্থাপন করা হয়নি। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর জাপান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (জাইকা) অনুদানে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও কক্সবাজারে দুটি রাডার বসানো হয়। এরপর একে একে রাডার বসে ঢাকা, রংপুর ও মৌলভীবাজারে। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে ঢাকা ও রংপুরের দুটি রাডার স্থাপন করা হয়। কিন্তু সেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০১৪ সালে।
২০১৫ সালে জাপান নিজেদের অর্থায়নে ঢাকা, মৌলভীবাজার, রংপুর, কক্সবাজার ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়াতে পাঁচটি রাডার প্রতিস্থাপন করে দিতে চেয়েছিল। সে অনুযায়ী ঢাকা ও রংপুরে কাজ শুরু হয়। তবে ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এর চার বছর পর আবার কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঢাকা ও রংপুর ছাড়া বাকি জায়গাগুলোতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় দেশটি।
আরও পড়ুন>> আবহাওয়ার সব রাডারই নষ্ট
আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মো. শামীম হাসান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, জাপানের জাইকার অর্থায়নে আরও তিনটি রাডার বসানোর কথা ছিল। কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না। জাপান এখন আর অর্থায়ন করবে না। তবে এ তিনটি রাডার প্রতিস্থাপন এখন বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে করা হবে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে রংপুর রাডার চালু হবে। ওখানে প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে।
ঢাকার বাইরের রাডারগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর ঢাকাতে যে রাডার আছে, সেটি দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছে আবহাওয়া অধিদফতর। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি রাডার থেকেও সংকেত নিচ্ছে অধিদফতর। এ রাডার দুটির একটি যশোরে ও আরেকটি চট্টগ্রামে অবস্থিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবহাওয়া অধিদফতরের এক আবহাওয়াবিদ বলেন, রাডার একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারে। রাডারে সবচেয়ে ভালো পূর্বাভাস পাওয়া যায় কালবৈশাখীর। এর বাইরে আছে স্যাটেলাইট। তবে তাতে মেঘের ওপরের অংশ পর্যন্ত কয়েক’শ কিলোমিটার দেখা যায়। বাংলাদেশ এখন জাপান, কোরিয়া ও চায়না স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করে পূর্বাভাস দিচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের উদাহরণ দিয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, যদি কক্সবাজারে রাডার থাকে, তবে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে ৪৫০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত সাগরে সৃষ্ট ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে পারবে। এতে ঝড়ের কেন্দ্রের গতিবেগ বা অবস্থান, বৃষ্টিপাত ও গতিপ্রকৃতি জানা যেত। এখন সেটা বিমানবাহিনীর রাডার দিয়ে করা হচ্ছে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।