ফাইল ছবি
দেশে চলন্ত ট্রেনে বিভিন্ন সময় শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন নারী যাত্রীরা। সর্বশেষ গত ৫ বছরে অন্ত:ত ১০টি ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এরমধ্যে ৮টিতেই জড়িত রেল কর্মচারীরা। রেল গবেষকদের অভিমত, নিজম্ব জমিতে, নিজের তৈরী পথে চলে রেল। তাই এ বাহনটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। তবে প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে এ যানবাহনটি কালের আবর্তে নারী যযাত্রীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে।
গত বুধবার (২৬ জুন) রাত সাড়ে ৪টার দিকে চলন্ত ট্রেনে ঘটেছে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা। সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেন উদয়ন এক্সপ্রেসে (৭২৪নং ট্রেন) এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার সময় ট্রেনটি লাকসাম এলাকা পার হচ্ছিলো। তবে সন্ধ্যার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। খাবারের বগিতে ভুক্তভোগী এ ঘটনার শিকার হন।
রেলওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ভুক্তভোগী তরুণী উদয়ন এক্সপ্রেসের খাবারের বগিতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় এসএস করপোরেশনের কয়েকজন কর্মী তাকে প্রথমে উত্ত্যক্ত করে। পরবর্তীতে ওই বগিতে ভোররাতের দিকে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। ঘটনার পরপরই ট্রেনে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসএস করপোরেশনের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করে রেলওয়ে পুলিশ। পরে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
তারা হলো- মো. জামাল (২৭), মো. শরীফ (২৮), মো. রাশেদ (২৭) ও আব্দুর রব রাসেল (২৮)।
এ ঘটনায় খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসএস করপোরেশনের কার্যক্রম স্থগিত করেছে রেলওয়ে। বুধবার রাতে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সহকারী প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকীর সই করা অফিস আদেশে কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয়টি জানানো হয়। আদেশে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের দ্বারা একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে উল্লেখ করা হয়। এসএস করপোরেশন নামে ক্যাটারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানটির মালিক কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার মোহাম্মদ শাহ আলম। রেলের বিভিন্ন ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস ও ঠিকাদারি ব্যবসা রয়েছে তার। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচলরত উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে তার প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ করতো।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্তদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণের ঘটনা মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ইতোমধ্যে জিআরপি থানায় ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ট্রেনের গার্ডকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে ইতোমধ্যে এসএস করপোরেশনের ক্যাটারিং লাইসেন্স অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করেছে। এ বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার (৭ জুন) সকালে সেই ট্রেনে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহমান বলেন, আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। সেদিন উদয়ন এক্সপ্রেসে কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপর মূল ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।
রেকর্ড খতিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ৫ বছরে অন্ত:ত ১০টি ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এরমধ্যে ৮টিতেই জড়িত রেল কর্মচারীরা।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।