ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। ২০২৩ সালের এ প্রতিবেদনে ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা ও বৈষম্যের দিক তুলে ধরা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানেও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সংখ্যালঘুদের ওপর নানা ধরনের বৈষম্যের অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হলেও বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে সমর্থন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ধর্মীয় বৈষম্য। বলা হয়েছে, সব ধর্মের মানুষের জন্য সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা। দেশটিতে বিভিন্ন ধর্মের জন্য রয়েছে আলাদা পারিবারিক আইন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের অভিযোগ উল্লেখ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।
এক্ষেত্রে তারা বিতর্কিত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেছে। ২০২৩ সালে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর ওই হামলার ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অনেকে।
পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনটিতে একজন মুসলিম নেতাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সরকার মসজিদে ইমাম নিয়োগ ও অপসারণে প্রভাব খাটিয়েছে। দেশজুড়ে ইমামেরা স্বাধীনভাবে তাদের খুতবার বিষয় নির্ধারণ করতে পারেননি। ইমামরা কোন বিষয়ে তাদের খুতবা দেবেন, সে বিষয়েও হস্তক্ষেপ করেছে সরকার।
গত বছরের এপ্রিলে এক নারীকে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপের ফতোয়া দেন একজন ইসলামি-বিশেষজ্ঞ। এজন্য ওই ইমাম ও গ্রামের তিনজনের বিরুদ্ধে আইনভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। ওই প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে দেশের আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে।
দেশে সহিংসতার ঘটনার ওপর নজরদারি করা সংগঠনগুলোর একটির হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ২২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১ জন নিহত ও ৮১ জন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন>> ড. ইউনূসের ট্রি অব পিস পদক নিয়ে যা জানাল ইউনেস্কো
দেশজুড়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অন্তত ২২টি সহিংসতা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন নিহত ও ৮১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মাত্রা, ধর্মীয় কাজে বাধার মতো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ওই প্রতিবেদনে ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর (বিশেষ করে মুসলিম ও খ্রিস্টান) সহিংস হামলা, শারীরিক লাঞ্ছনা ও মসজিদ-গির্জা ধ্বংসের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের বিষয়ে ওয়াশিংটনের ভারতীয় দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। ভারত সরকার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ মুসলমান এবং ২ শতাংশের বেশি খ্রিস্টান। রাজ্য মণিপুরে গত বছরের মে মাস থেকে সংখ্যালঘু কুকি ও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মেইতেই নৃগোষ্ঠীর মধ্যেকার সহিংসতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম পুরুষরা গরু জবাই করা বা গরুর মাংস বিক্রি করছে, এমন অভিযোগে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলার উদাহরণ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেতে দেখছে। সম্প্রতি তার অধীনে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি তৃতীয়বারের মতো দেশটির ক্ষমতায় এসেছে।
প্রতিবেদনে পাকিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়ন ও ধর্মনিন্দার অভিযোগের শাস্তি দেয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালে পাকিস্তানে ৩২৯ জনের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ মুসলিম, ২০ শতাংশ আহমদী এবং ৩.৩ শতাংশ খ্রিস্টান ছিল। ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লাসফেমির অভিযোগে ১৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে, যাদের মধ্যে ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মৃত্যুদণ্ড উচ্চ আদালতের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।