ছবি: আপন দেশ
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হয় ১৭ বছরের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ। তাকে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যার মধ্যে ফাইয়াজের বাবা-মাকে খুঁজে তার জামিনের বিষয়ে দরখাস্ত দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
আদালত আরও বলেন, বাচ্চা ছেলে। আপনার বাচ্চা হলে কী করতেন? সে বাবা-মায়ের কাছে থাকবে।
আইন লঙ্ঘন করে ফাইয়াজকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পুলিশ ভ্যানে তোলা। রিমান্ডে নেয়ার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকার ও বিচারপতি মো. মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে রিটটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোরশেদ আদালতে বলেন, ওই শিশুটিকে রিমান্ডে নেয়া হবে না। তার পরিবার আদালতে জামিন আবেদন নিয়ে গেলে তা বিবেচনা করা হবে। আর এক্ষেত্রে শিশু আইনে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এসময় হাইকোর্ট বলেন, আমরা টিভি চ্যানেলে দেখেছি, তার বাবা সব ডকুমেন্টস দেখিয়েছে যে ছেলেটির বয়স ১৭। কিন্তু তা ম্যাজিস্ট্রেট বিবেচনা (কনসিডার) করেনি! কাজ একটা করে তা হালাল করার জন্য জেদাজেদি করবেন? বিষয়গুলো যেন এমন না হয়।
এসময় আদালত বলেন, ঠিক আছে। অনেক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। কিন্তু এমন ২/১ ঘটনার জন্য পুরো বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিচারকের এমন অপকর্মের কারণে বিচারও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
একপর্যায়ে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, বাচ্চাটা আপনার হলে কী করতেন? তাই এ বিষয়ে আজই পদক্ষেপ নিন। আমরা আজ কোনো আদেশ দিচ্ছি না। আগামীকাল বিষয়টি শুনানির জন্য থাকবে।
শুনানি নিয়ে আদালত থেকে বের হয়ে আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি দেখে, যে একজন শিশুকে এভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে পুলিশ ভ্যানে তুলছে, এটি দেখে সকালবেলা আমরা বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তখন আদালত বলেছেন, পিটিশন আকারে নিয়ে যেতে। পিটিশন নিয়ে গেলাম। শিশু আইন ২০১৩ যেটি আছে, এ আইনের কতগুলো স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। কাউকে যদি গ্রেফতার করতে হয়, তাহলে পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি কি না।
রিমান্ডের বিষয়ে অনেক নিয়ম আছে। আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, কোনো শিশুকে হাতকড়া পরানো যাবে না। আজ আদালত মৌখিক আদেশ দিয়েছেন, কালকে রিটটি শুনানির জন্য তালিকায় আসবে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, আটক ব্যক্তি মাইনোর, তাকে রিমান্ডে নিতে পারে না। হাইকোর্ট বলেছেন, তার রিমান্ড বাতিল করে বাবা-মায়ের হেফাজতে দিতে। তাকে রিমান্ডে নেয়ার সুযোগ নেই।
শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ফাইয়াজের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়।
জন্মনিবন্ধন অনুসারে, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে। বর্তমানে ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের এ শিক্ষার্থী। তাকে শনিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়। মামলার এজাহারে ফাইয়াজের বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর।
গত ২৪ জুলাই রাতে ফাইয়াজকে মাতুয়াইলের বাসা থেকে সাদাপোশাকে একদল লোকজন এসে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ধরে নিয়ে যায়- অভিযোগ জানায় তার পরিবার।
আপন দেশ/এমবি/ এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।