ফাইল ছবি
২০১৯ সালের ৯ই এপ্রিল ঢাকার শ্যামলি থেকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মাইকেল চাকমাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে গোপন বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছিল, যেটি ‘আয়নাঘর’ নামে অনেকের কাছে পরিচিত।
দীর্ঘ ছয় বছর ‘আয়নাঘরে’ বন্দি থাকার পরে তাকে চট্টগ্রামের একটি সড়কের ধারে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেয়া হয়।
বাড়িতে ফিরে মাইকেল চাকমা জানতে পারেন পূত্র শোক বুকে নিয়ে তার বৃদ্ধ পিতা মারা গেছেন। মাইকেল চাকমা আর জীবিত নেই ধরে নিয়ে রীতি মেনে তার শেষকৃত্যও করেছে পরিবার।
এক সাক্ষাত কারে ‘আয়নাঘরে’ কাটানো দিনগুলোর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন মাইকেল চাকমা। ছেড়ে দেয়ার আগে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার রাতটিকে জীবনের শেষ সময় হিসেবেই ভেবে নিয়েছিলেন তিনি। তবে ২০১৯ সালের পর ৬ই আগস্ট ২০২৪ সালে প্রথম দিনের আলোর দেখা পান মাইকেল চাকমা। তবে তাকে যে এদিন ছেড়ে দেয়া হবে সেটি কল্পনাও করেননি।
মাইকেল চাকমা জানান, গত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরে বেশ কয়েকটি গোপন কারাগারে আটকে রাখা হয় তাকে। তবে তাকে কোনো মারপিট করা হয়নি। ‘আয়নাঘরে’ যে পরিবেশে রাখা হয় সেটি অত্যন্ত ভয়ংকর। সেখানে কোনো জানলা নেই, কোনো আলো নেই, বাতাস নেই চারিদিকে দেয়াল। এটা কবরের মতো।
মাইকেল চাকমা যেসব নির্জন ঘরে বন্দি ছিলেন সেগুলোর বিবরণ দিয়ে বলেন, কোনও কোনোও রুম সাত ফিট বাই এগারো ফিট, কোনো রুম ছিল আট ফিট বাই এগারো বা বারো ফিট এরকমের। একটা খাট আছে তিন ফিট বাই সাত ফিটের লোহার। তাকে এ দীর্ঘ সময়ে ঘুরেফিরে ৪-৫টি বন্দিশালায় তাকে রাখা হয়। এসব বন্দিশালায় আরো মানুষ আটক ছিলেন বলে জানান তিনি।
মাইকেল বলেন, গত পাঁচ বছরের বেশি সময়ে তার সঙ্গে রাখা হয়েছে আরো দুজনকে। একজনের নাম সাইদুল আরেকজন এরশাদ। গোপন কারাগারে কেউ কাউকে দেখা বা কথা বলার সুযোগ ছিল না। অত্যন্ত গোপনে কথা বলে তাদের পরিচয় জানতে পারেন তিনি। এছাড়া আরো একজনের নাম শুনতে পারেন যিনি পাশের রুমে বন্দি ছিলেন। একসাথে যাদের সঙ্গে ছিলেন তার মধ্যে একজনের নাম সাইদুল আরেকজন এরশাদ। সাইদুলের বাড়ি ছিল রংপুরে। এরশাদের বাড়ি ছিল ঢাকার কচুক্ষেতের কাছাকাছি।
মাইকেল চাকমা বলেন, সাইদুলকে যেদিন নিয়ে যায় আমি আমার বোনের নম্বর মুখস্ত করিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে বুঝলাম মোবাইল নম্বরের শেষের একটি ডিজিট আমি ভুল দিয়েছিলাম।
মাইকেল জানান, তার পাশের সেলে জাকির নামে একজন ছিলেন। রুমে আটক বন্দির আরেকজনের সঙ্গে কথোপকথন শুনে তাদের কোনো বাহিনীর সদস্য বলে মনে হয়েছে। ফিস ফিস করে বলতো আমি জাকির, আমি জাকির। আমার কাছে বার বার জানতে চেয়েছে শরিফকে তুমি চেনো কিনা। যিনি এক বলেছিল অপরজনের নাম শুনিনি তাকে স্যার ডাকতো জাকির। জাকির তাকে বলেছে আমাদের সম্ভবত কোর্ট মার্শাল হবে।
মাইকেল আরো বলেন, জাকিরকে একবার পিটিয়েছে। মারধর করেছে। জাকির ওখান থেকে এসে বলছে আমাকে অনেক আজকে মারধর করেছে। ওহ পারছি না। আমার জ্বর উঠেছে। তারা জাকিরের সঙ্গে কথাবার্তা বলতো। তাকে ওষুধ দিতে আসতো এসময় তাদের মধ্যে যে কথা হতো এটুকু আমি পায়।
মাইকেল চাকমা আরো বলেন, তবে গোসল করতে নেয়ার সময় বাথরুমের ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিয়ে তিনি কিছু বন্দি মানুষকে দেখেন। তারা বিভিন্ন বয়সের লোক। কারোর চুল পাঁকা, দাড়ি পাঁকা। কেউ কম বয়সী। কোনোও কোনোও লোককে দেখেছিলাম তার বয়স হয়তো পঞ্চাশ-পঁয়তাল্লিশ এরকম হবে। কোনও কোনও লোক দেখেছি ষাটের ওপরে হবে। কেউ একদম ইয়াং।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।