ফাইল ছবি
দেশ ছেড়ে ভারতে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের নামে আরও একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সৈকত (১৯) হত্যায় নিহতের বাবা মো. মাহাবুবর রহমান এ মামলা করেন।
রোববার (২৫ আগস্ট) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় এ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, তেজগাঁও জোনের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক, মোহাম্মদপুর জোনের সাবেক এডিসি রওশানুল হক সৈকত।
এছাড়া মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (পেট্রোল) শহিদুল হক, মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান, মোহাম্মদপুর থানার সাবেক ওসি মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তোফাজ্জল হোসেন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহরিয়ার আলমের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে নিহতের বাবা উল্লেখ করেছেন, গত ১৯ জুলাই আনুমানিক বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটে নূরজাহান রোডের মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় তার ছেলেকে। তিনি তার ছেলে হত্যার সঠিক বিচার চেয়েছেন।
নরসিংদীতে শ্রমিক হত্যা মামলা:
নরসিংদীর মাধবদীতে টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিক জামান মিয়া (১৭) নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) নিহত জামান মিয়ার ভগ্নিপতি মো. আঙ্গুর মিয়া নরসিংদীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হকের আদালতে মামলার আবেদন করেন। এ সময় আদালতের বিচারক পুলিশকে মামলাটি তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
নিহত জামান মিয়া ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার দেউলডাংরা এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে। নরসিংদীর মাধবদীর ভগিরথপুর এলাকায় থেকে স্থানীয় একটি টেক্সটাইল কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন জামান মিয়া।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২১ জুলাই সদর উপজেলার মাধবদীর মেহেরপাড়ার পৌলানপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে তৎকালীন সরকারের দমন–পীড়ন ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান চলছিল। দুপুর সাড়ে ১২টায় আওয়ামী লীগের ৩০০ থেকে ৩৫০ নেতা-কর্মী হাতে লাঠিসোঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও এলোপাতাড়িভাবে গুলিবর্ষণ করেন। এ সময় তাদের ছোড়া একাধিক গুলি জামান মিয়ার পেটসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্ধ হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পাঁচ দিন পর ২৫ জুলাই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল পৌনে ৯টার দিকে জামানের মৃত্যু হয়।
মামলার আরজিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামাল শক্ত হাতে ছাত্রদের আন্দোলন দমনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের পরোক্ষ সহযোগিতা, উসকানিমূলক বক্তব্য ও হুকুমে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অজ্ঞাতনামা আসামিরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে জামানকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে পেনাল কোডের ১৪৩/ ১৪৯/ ৩০২/ ১০৯/৩৪ ধারার অপরাধ করেছেন। তাদের নির্দেশেই ছাত্র-জনতার যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা একযোগে পিটিয়ে ও গুলিবিদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের হত্যা ও আহত করেছিলেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আদালত মামলাটি তালিকভুক্ত করতে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য এর আগে গত ২২ আগস্ট আজিজুল হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৮১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামা ৪০০/৫০০ আসামি করে নরসিংদী আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।