Apan Desh | আপন দেশ

পুলিশের ১৮৭ কর্মকর্তা ফেঁসে যাচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৯:৫৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুলিশের ১৮৭ কর্মকর্তা ফেঁসে যাচ্ছেন

ফাইল ছবি

পুলিশের ১৮৭ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হচ্ছে। বিভিন্ন স্তরের পুলিশ সদস্যরাও এ মালায় পড়ছেন। গত ৫ আগস্টের পর তারা আর কর্মস্থলে ফেরেননি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা চাকরিতে ফিরতে পারবেন না। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়াসহ এদের অনেকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ আইন অনুযায়ী চলবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের যেসব প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে তারাও পলাতক। তবে পলাতক হাসিনা সরকারের অন্যতম দোসর হিসাবে চিহ্নিত প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তারা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার উপর গুলির নির্দেশ দিয়ে হতাহত করেন তাদের গ্রেফতার না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিশেষ করে গ্রেফতার নিশ্চিত না করে যারা তাদের পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।

জানা গেছে, পুলিশের পলাতক কর্মকর্তাদের তালিকায় শীর্ষে আছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ডিআইজি হারুন অর রশীদ। এখনো চাকরিচ্যুত নন পুলিশ সদর দফতরের এ তালিকায় তাকে এক নম্বরে রাখা হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে-পরে সংগঠিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামির তালিকায়ও তিনি শীর্ষে। এসব মামলার মধ্যে ২০১১ সালে যে ঘটনাকে কেন্দ্র এ কর্মকর্তা লাইমলাইটে আসেন সেই তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নাল আবদিন ফারুককে নির্যাতনের মামলাও আছে। জয়নাল আবদিন ফারুক নিজেই বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। এ পর্যন্ত আলোচিত এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩৮ মামলায় তার নাম পাওয়া গেছে।

পুলিশ সদস্যদের পলাতক তালিকায় ৫ জন আলোচিত অতিরিক্ত ডিআইজি। তাদেরকেও কর্মস্থলে অনুপস্থিত হিসাবে দেখানো হয়েছে। পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিতীয় সারিতে আছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। ছাত্র-জনতাসহ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৭টি। এ কর্মকর্তা কর্মস্থলে আর যোগদান করেননি। ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুককে সংসদ ভবনের সামনে মারধরের ঘটনা ভাইরাল হলে তিনি বিগত সরকারের গুডবুকে চলে আসেন। ওই সময় তেজগাঁও জোনের এডিসি ছিলেন বিপ্লব সরকার। যে কজন পুলিশ কর্মকর্তা সরকারের শীর্ষে অবস্থান করছিলেন তাদের মধ্যে বিপ্লব সরকার অন্যতম। প্রায় ১৩ বছর পর সেই জয়নাল আবদিন ফারুককে মারধরের ঘটনায় আলোচিত সেই হারুন-বিপ্লব জুটির মামলাটি করেন জয়নুল আবদিন ফারুক নিজেই।

কর্মস্থলে যাচ্ছেন না অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার নুরুন্নবী, অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম মেহেদী হাসান ও অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জিত কুমার রায়। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগে-পরে সংঘটিত হতাহতের ঘটনায় একাধিক মামলা করা হয়েছে। অসুস্থতার আবেদন করে কর্মস্থলে যাচ্ছেন না অতিরিক্ত ডিআইজি উত্তম কুমার পাল, এসপি আবু মারুফ হোসেন, শাহ নুর আলম পাটোয়ারী, র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশানুল হক সৈকত, এএসপি মফিজুর রহমান পলাশ, এএসপি আরিফুজ্জামান, এএসপি আল ইমরান হোসেন, এএসপি ইফতেখার মাহমুদ। চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বহুল আলোচিত আরেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান।

এছাড়া এএসপি মি. জন রানা ৫ আগস্টের আগেই চাকরি ছেড়ে দেয়ার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। তিনি ২ আগস্ট পুলিশের চাকরি ছাড়েন। রংপুর ডিআইজি কার্যালয় থেকে সেটি পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে ২৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। পলাতকের ১৮৭ জনের এই তালিকায় ৫ জন ইন্সপেক্টরও আছেন। এ ছাড়া ১৪ জন এসআই, ৯ জন এএসআই, ৭ জন নায়েক এবং ১৩২ জন কনস্টেবল রয়েছেন। এই কনস্টেবলদের মধ্যে দুজন নারী সদস্যও আছেন।

এদিকে চাকরিতে অনুপস্থিত থাকলেও বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিতর্কিত তালিকার কয়েকজনকে সংযুক্ত/পদায়ন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে উত্তম কুমার পালকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দারকে রাজশাহীর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত, আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেনকে এন্টিটেরোরিজম ইউনিটে পুলিশ সুপার, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ খন্দকার নুরুন্নবীকে নোয়াখালীর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে সংযুক্ত এবং ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায়কে খুলনা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে সংযুক্ত করার আদেশ জারি হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের যে অবনতি হয়েছে স্বাধীনতার ৫১ বছরের ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন। শুধু তাই নয়, চরম ইমেজ সংকটেও পড়েছে এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও দেশের কোথাও এখন আর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার মতো সক্ষমতা পুলিশ গড়ে তুলতে পারেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে যেভাবে নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। এর সব দায় এখন পুলিশের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর পড়েছে।

এদিকে মনোবল ভেঙে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের উজ্জীবিত করতে কাজ করছেন প্রায় ২০ বছর ধরে পদ-পদোন্নতি বঞ্চিত ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২০, ২২ ও ২৪ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তারা। ছাত্র আন্দোলনের মতো পুলিশেও আছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। তবে এটা বাইরে প্রকাশ হয় না। ভেতরে জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়েছেন এমন অফিসারের সংখ্যাও কম নয়। অন্তত দুই দশক ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা মানসিক ট্রমা নিয়ে বেঁচে আছেন। অথচ দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকা পুলিশের এ কর্মকর্তাদের এই সংকটময় মুহূর্তে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা জুলাই-আগস্ট ম্যাসাকারে জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারেন সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আপন দেশ/অর্পিতা 

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়