Apan Desh | আপন দেশ

‌‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সেনাবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১০:৪২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‌‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সেনাবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন’

ছবি সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেয়া সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনা প্রধান এসব কথা বলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেয়া প্রধান প্রধান সংস্কার কাজগুলো সম্পন্ন করতে সাহায্য করার জন্য ‘যাই হোক না কেন’ অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। যাতে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

রয়টার্স বলছে, গত আগস্টের শুরুতে হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং সেনাবাহিনী কোনও বাধা দেয়নি। আর এতেই শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় এবং ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর স্বৈরাচারী এ শাসক পদত্যাগ করে প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যান।

ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওয়াকার-উজ-জামান সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্তি দেয়ার একটি রূপরেখাও দিয়েছেন।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমি তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে থাকব। যাই হোক না কেন। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।

বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. ইউনূস ১৭ কোটি মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কয়েক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, সংস্কারের পর গণতন্ত্রে উত্তরণ এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে করা উচিত। তবে এ সময়ে ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।

সেনাপ্রধান বলেন, আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব— এ সময়সীমার মধ্যেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।

রয়টার্স বলছে, অবশ্য বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল উভয়ই গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিল।

জেনারেল ওয়াকার বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং তিনি (সেনাপ্রধান) প্রতি সপ্তাহে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অশান্তির পর দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে— আমরা যদি একসাথে কাজ করি তবে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনও কারণ নেই।

গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তৎকালীন সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়নে ও হিংসাত্মক সংঘর্ষে এক হাজারেরও বেশি লোক নিহত হন। একপর্যায়ে এ আন্দোলন বিস্তৃত সরকারবিরোধী বিদ্রোহে পরিণত হয়, যা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন।

গণঅভ্যুত্থান ও বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী ঢাকার জমজমাট রাস্তায় শান্তি ফিরে এসেছে, কিন্তু হাসিনার প্রশাসনের নাটকীয় পতনের পর সিভিল সার্ভিসের কিছু অংশ এখনও সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশের পুলিশের প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার সদস্য এখনও বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি কাজ করছে সেনাবাহিনী।

দীর্ঘ কর্মজীবনে একজন পদাতিক অফিসার হিসেবে এ অশান্তির সময়গুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন জেনারেল ওয়াকার। তিনি বলেছেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।

সেনাপ্রধান বলেন, আমি এমন কিছু করব না যা আমার সংস্থার (সেনাবাহিনী) জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।

হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর থেকে প্রস্তাবিত ব্যাপক সরকারি সংস্কারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও তার সদস্যদের ইতোপূর্বে করা অন্যায়ের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে এবং ইতোমধ্যে কিছু সৈন্যকে শাস্তিও দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও বিশদ কোনও বিবরণ দেননি জেনারেল ওয়াকার।

আপন দেশ/মাসুম

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়