Apan Desh | আপন দেশ

আনিসুল হকের বান্ধবীর কথায় চলত আইন মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:২০, ৩ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ১৬:৫০, ৩ অক্টোবর ২০২৪

আনিসুল হকের বান্ধবীর কথায় চলত আইন মন্ত্রণালয়

ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বান্ধবীর কথায় চলত আইন মন্ত্রণালয়। তার ফোনে পাল্টে যেত মামলার রায়। ফোনেই শুনানি চলত অথবা বন্ধ হতো। ওই বান্ধবী বললে জামিন অযোগ্য ব্যক্তির জামিন হতো। 

সাবেক আইনমন্ত্রীর বান্ধবীর পরিচয়ও ছিল অনেক। কখনো তিনি আইনজীবী, কখনো মানবাধিকার কর্মী বা ব্যবসায়ী। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী বিয়োগের পর আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি।

জানা গেছে, আনিসুল হক ও তার এ বান্ধবী ১০ বছরে অবৈধভাবে ২০০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তৌফিকার সিন্ডিকেট আইন মন্ত্রণালয়ের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করত। প্রতি জেলার চিফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা জজ নিয়োগে শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে এ সিন্ডিকেট। অবৈধভাবে অর্জিত টাকা পাচার হয়েছে কানাডাসহ আরো অনেক দেশে।

তৌফিকার ছেলে থাকেন কানাডায়। পাচার করা অর্থ দিয়ে বিপুল সম্পদ গড়েছেন ওই নারী। তৌফিকা-আনিসুল চক্র কানাডা, দুবাই এবং  মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম হিসেবে কয়েকটি বাড়ি করেছে। তৌফিকার সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি করত সাব রেজিস্টার অফিস থেকেও। ঢাকা ডেপুটি রেজিস্ট্রার্ড সাদিকুর নাহারের মাধ্যমে তৌফিকা হয়ে টাকা পৌঁছাত স্বৈরাচারি সরকারের আইনমন্ত্রীর হাতে।

বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিনা অপরাধে শাস্তি দিতে বাধ্য করতেন আনিসুল হক। আবার যারা রাজনীতিতে জড়িত না, তাদের নাশকতার মামলায় জড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তৌফিকা।

আনিসুল হকের নির্বাচনি হলফনামায় তিনটি পুকুর, কৃষিজমির ফসল ও মাছ চাষাবাদের তথ্য দিয়েছিলেন। এ আয়ের উৎস থেকে তিনি গত কয়েক বছরেই শত শত কোটি টাকার মালিক। তিনি মুখে বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও তার কথা ছাড়া জামিন দিতে পারতেন না বিচারকরাও। মামলার আসামিদের জামিন করিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আর ডলার নিতে বিশ্বস্ত ডালপালা তৈরি করেছিলেন। ৫ আগস্টের পর  এসব ডালপালা পলাতক করেন।

এসব কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করতেন সালমান এফ রহমান। দুজনের সম্পর্কও ছিল মধুর। এ কারণে তারা গ্রেফতারও হয়েছেন একসঙ্গে।

জানা যায়, সাবেক এ মন্ত্রীর আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। মন্ত্রীর নির্বাচনি হলফনামার তথ্যমতে তিনটি পুকুর, কৃষিজমির ফসল ও মাছের চাষাবাদ ছিল আয়ের প্রধান উৎস। এর পর মন্ত্রী হওয়ার তার সম্পদের হিসাব বাড়তে থাকে। ঘুসের টাকা গুনতে বাসায় বসিয়েছিলেন টাকা গোনার মেশিন। সিটিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ৪শ কোটি টাকা জামানত এবং ২০০ কোটি টাকা চলতি মূলধন দিয়ে ব্যাংকের যাত্রা শুরু করেছিলেন আনিসুল হক। তার মা প্রথমে এ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর বহুল তৌফিকা করিমকে চেয়ারম্যান করা হয়। তৌফিকা করিমই ছিলেন আনিসুল হকের চালিকাশক্তি। তিনি যা বলতেন তাই করতেন আনিসুল হক। এ তৌফিকা করিমের ছেলে ও মেয়েকে কানাডায় বাড়ি করে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, প্রাইভেট একটি টেলিভিশনে ৪০ ভাগ শেয়ার আছে তার।

তদবিরের ডালপালা : তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, তদবিরের টাকা এক সময় নিতেন এপিএস জীবন। বড় বড় ব্যবসায়ীর দুর্নীতির মামলার তদবিরের লেনদেন হতো আনিসুল হকের গুলশানের অফিসে। এপিএস জীবন উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর সব লেনদেনের দায়িত্ব পান বিতর্কিত তৌফিকা করিম। এ তৌফিকা হচ্ছেন পিয়াস করিমের আপন বোন। তৌফিকাকে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিয়োগ দিয়ে সামাজিক জীবনে ফেরাতে চেষ্টা করেন। তদবিরের টাকা লেনদেনে আরও যুক্ত ছিলেন আনিসুল হকের এক ভাগ্নে। সব বড় বড় দুর্নীতির মামলার আসামিদের জামিনের গ্যারান্টি দিতেন তিনি। বড় বড় ক্রিমিনালদের হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর নিু আদালত থেকে জামিন করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিতেন।

জানা যায়, টাকার বিনিময়ে নতুন বিচারপতি নিয়োগের মতো ঘটনা অতীতে ঘটেনি। চরম অযোগ্য ও বিতর্কিত ৩ জন জেলা জজ এবং ৫ জন অযোগ্য আইনজীবীকে বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে তৌফিকা করিমের মাধ্যমে। তাদের নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর ডিজায়ার’।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়