আপন দেশ
রিকশার পাদানিতে আড়াআড়িভাবে ঝুলে আছে নাফিসের গুলিবিদ্ধ দেহ। এক পাশে শূন্যে ঝুলছে মাথা। যা দেশের পতাকা দিয়ে মোড়ানো, আর অন্যপাশে ঝুলছে নিথর পা দুটো। রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ চেষ্টা করছেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তবে নাফিস তখনো বেঁচে ছিল। কিন্তু পুলিশ তাকে গুলিবিদ্ধ করে ফেলে দিতে চেয়েছিল ম্যানহোলে। পোড়ানোর চেষ্টাও করেছিল তারা।
নূর মোহাম্মদ নামে সাহসী রিকশাচালক পুলিশি অত্যাচার উপেক্ষা করে নাফিসকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। নাফিস ছিল ১৭ বছরের এক কিশোর। সম্প্রতি বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেছিল সে।
দিনটি ছিল ৪ আগস্ট। নাফিস শাহবাগ হয়ে ফার্মগেটের আন্দোলনে যোগ দেয়। দুপুর দেড়টায় সে সর্বশেষ মাকে ফোন করে জানায় যে সে নিরাপদে আছে। মা তাকে তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরতে বলে। কিন্তু এরপর আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সন্ধ্যার দিকে তার বাবা ছেলের সন্ধানে বের হন। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও কোনো খোঁজ মেলেনি। রাত বারোটার দিকে ফিরে আসেন বাসায়। এরই মধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি হৃদয়বিদারক ছবিতে নাফিসকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় তার পরিবার।
নূর মোহাম্মদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেদিন ফার্মগেট এলাকায় পৌঁছানোর সময় বৃষ্টির মতো গুলি চলছিল। ফার্মগেট পুলিশ বক্সে পুলিশ তাকে টেনে নিয়ে গিয়ে একটি গুলিবিদ্ধ দেহ তার রিকশায় তুলতে বলে। নূর মোহাম্মদ বুঝতে পারেন না কী ঘটছে। কিন্তু পুলিশি অত্যাচারের ভয়ে নাফিসের দেহ রিকশায় তুলে নেন তিনি।
রিকশাচালকের বর্ণনায় জানা যায়, পুলিশ তাকে ম্যানহোলে ফেলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা খুঁজে না পেয়ে পরে তাকে পোড়ানোর পরিকল্পনা করে। তবে নূর মোহাম্মদ সাহস করে নাফিসকে আল রাজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগের বাঁধার মুখে আল রাজি থেকে ফিরে তিনি চক্ষু হাসপাতালে যান। সেখানে সেনাবাহিনী এগিয়ে আসলে নাফিসকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে নাফিস পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।