ছবি: আপন দেশ
শেখ হাসিনাকে সাইকো আখ্যা দিয়েছেন তথ্য সম্প্রচার, ডাক, টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরতে হবে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলার জন্য। কিছু গণমাধ্যম জুলাই আন্দোলনের স্পিরিট ধারণ থেকে সরে এসেছে। আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছে কিছু গণমাধ্যম তাদেরকে নিহত ও মৃত বলে লিখে থাকেন। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে তারা শহিদ।
রোববার (২০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামের কথা জানি আবার এর উল্টোদিকে বিভিন্ন ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দালালির কথাও জানি। আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। বর্তমানে গণমাধ্যম যে স্বাধীনতা উপভোগ করছে তা এর আগে বাংলাদেশ কখন এরকম চর্চা করেছে সে ইতিহাস আমার জানা নেই।
উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং আকাঙ্ক্ষা পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখের কারণ এখনো আমাদের অনেক ভাই-বোনেরা আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এখনো অনেকে শহীদ হচ্ছে অথচ আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে সে শহীদ এবং আহতদের কথা দিনকে দিন কমে আসছে। জনগণের স্মৃতি থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বেশ কিছু গণমাধ্যম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নিহত হিসেবে উল্লেখ করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সকল প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে শহীদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশবাসী তাদেরকে শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সেখানে গণমাধ্যম তাদের শহীদ বলতে কার্পণ করছে। গণমাধ্যমে তাদেরকে মৃত এবং নিহত হিসেবে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, এ গণঅভ্যুত্থান রক্তের মাধ্যমে ঘটেছে, রক্ত দিয়েই নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন এ ইতিহাস মুছে যাওয়ার নয়।
আমরা দেখেছি গণঅভ্যুত্থানের সময় অনেক সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন আহত হয়েছেন। প্রেসক্লাবের অনেক সদস্য আমাদের গণঅভ্যুত্থানের সমর্থন জুগিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সে সময় আমরা শুনেছি আমাদের সংবাদ প্রচার করতে দেয়া হয়নি, সংবাদ সংগ্রহের কারণে মিডিয়া হাউজ গুলোতে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছেন। এখনো সে সাংবাদিকদের নানা প্রকার চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। সে হাউস গুলোতে ফ্যাসিবাদের এজেন্টরা রয়ে গেছে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা স্বাধীন গণমাধ্যমের কথা বলছি সেই গণমাধ্যমের মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করে জনগণের সামনে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই। ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে না।
আমি টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছিলাম শেখ হাসিনা একজন সাইকোপ্যাথ ও রক্তচোষা, তাই প্রমাণিত হলো। আমরা প্রথমে নিয়ম তান্ত্রিক ভাবেই একটা আন্দোলন করছিলাম। সর্বপ্রথম সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের উপর আক্রমণ করে। আমরা বারবার আমাদের দাবি মেনে নেয়ার কথা বলেছি কিন্তু তারা আমাদের বন্দুকের সামনে দাঁড় করিয়েছে। আপনারা দেখেছেন কিভাবে আমাদের গুম করা হয়েছে এবং তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা দেশে থাকা সমর্থকদের সরকারবিরোধী আন্দোলন করার জন্য উস্কানি দিচ্ছে। আমি তাদের বলতে চাই শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য আর ফিরতে পারবে না শুধুমাত্র ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়ানোর জন্যই ফিরবে। যারা এখনো পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উস্কানিতে জনজীবন দুর্বিষহ করার চেষ্টা করছেন তাদেরকে সাবধান করে দিতে চাই।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এক জিনিস আর ফ্যাসিবাদের পক্ষে কথা বলা অন্য জিনিস। আবারো বলতে চাই সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করুন কিন্তু জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না, ছাত্র-জনতার রক্তের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা প্রেসক্লাবের লড়াকু সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানান এবং যারা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
ক্লাবের সভাপতির বক্তব্যে কবি হাসান হাফিজ বলেন, গণমাধ্যমে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো রয়েছে। তাদের অপসারণ করা দরকার। ধীরে ধীরে তা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কালের কণ্ঠের এ সম্পাদক।
এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূইয়া, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনক হাসান, বখতিয়ার রানা, কাদের গনি চৌধুরী, শাহনাজ পলি, আব্দুল হাই শিকদার, মোমিন হোসেন, মাসুমুর রহমান খলিলী, মহসীন হোসেন প্রমুখ । জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ সহ অসংখ্য সাংবাদিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জুলাই গণহত্যা, গণ-অভ্যুত্থানের খণ্ডচিত্র ও ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। ক্লাবের প্রয়াত সদস্য ও জুলাই আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরিবেশন করা হয় জাতীয় সঙ্গীত ও ক্লাব সঙ্গীত।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের ৭০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেক কাটেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এরপর দেশ বরেণ্য শিল্পীরা দেশের গান পরিবেশন করেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। লাইটিং করা হয় বিভিন্ন ভবন। সদস্য ও স্ত্রীদের জন্য রাখা হয় সেলফি কর্নার। এ দিনে বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
আপন দেশ/এমবি/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।