Apan Desh | আপন দেশ

২৮ অক্টোবরের হামলায় চোখ হারাচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ১৮:১২, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ১৮:৩৩, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

২৮ অক্টোবরের হামলায় চোখ হারাচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা

ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে সরকার পতনের একদফা দাবিতে জমায়েত হয়েছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় আহত হন অনেকেই। টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও গুলির মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ আরিফ বিল্লা (আলিফ) পুলিশের গুলিতে আহত হন। চিকিৎসার পরিবর্তে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিন মাস ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। চিকিৎসা ছাড়া থাকার কারণে আলিফের ডান চোখ ঘোলা হয়ে গেছে। এখন তিনি অপর চোখ হারানোর শঙ্কায় আছেন।

আরিফ জানান, এখন তার চোখে কারণে-অকারণে ব্যথা করছে। যদি দ্রুত উন্নত চিকিৎসা না করা হয় তবে তার অন্য চোখের গুরুতর পরিণতি হতে পারে। সমাবেশের দিন ডান চোখ হারানোর পর আলিফের দুই চোখই এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ড. হাসান জানান, আন্দোলনের বৈরী পরিবেশের মধ্যেও আলিফের ডান চোখ থেকে গুলি বের করে ফেলার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। সময় মতো চিকিৎসা না করা হলে সংক্রমণের কারণে আরিফ চিরতরে দৃষ্টি হারাতে পারে। এজন্য তাকে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

সমাবেশে গুলিতে আহত হওয়া আরও অনেকের মধ্যে গুলশানের ছাত্রদল নেতা আশরাফুল ইসলাম (জাসাম) রয়েছেন। তিনি চোখে অপারেশন করিয়েও দৃষ্টি হারিয়েছেন। জাসাম ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে চান। যেখানে তার মতো আরও আহত বিএনপি নেতাকর্মী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিএনপির এ চিকিৎসক গত ৯ বছরে কয়েকশ’ চোখের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। ঢাকার বাইরে থাকা সত্ত্বেও তিনি রাতে ঢাকায় চলে আসেন। এভাবেই অনেকের চিকিৎসা দিয়েছেন। অপারেশন শেষ করে পরের দিনই আবার ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন।

ঢাকায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্নভাবে জনগণের ক্ষতি করেছেন। গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণঅধিকার পরিষদের কিছু নেতাকর্মীকে লক্ষ্য করে হাত, পা, চোখে গুলি করা হয়।

এমন সময়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঢাকার বাইরে থাকতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তখন আমাদের গ্রেফতার করতো তাহলে আহতদের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় কি-না এ শঙ্কা ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ৬ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে লগি-বইঠা দিয়ে পিটিয়ে মেরেছিল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবরে বিএনপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় ৬৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী গুলিতে আহত হয়েছিলেন। দুটি বড় ভবনের ছাদ থেকে দাঙ্গা পুলিশ গুলি চালালে সমাবেশে অংশ নেয়া নিরপরাধ ব্যক্তিরা মাথা ও মুখে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তারা এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

একই ঘটনায় আহত হন গুলশান থানা ছাত্রদলের আশরাফুল ইসলাম ওরফে জাসাম। তিনি জানান, বা চোখে অপারেশনের পর এখন আর দেখতে পারছেন না। ১৫ দিন আগে মাথায় চারটি ছররা গুলির মধ্যে একটি অপারেশন করে বের করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের আর্থিক সহায়তা ও জিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ধারাবাহিকভাবে তার অপারেশনগুলো করা হয়েছে।

চিকিৎসার জন্য জাসাম এখন ভারতে যেতে চান। গত বছর হাসিনার স্বৈরশাসনের মধ্যেই হবিগঞ্জের ছাত্রনেতা সাইফুলও চেন্নাই গিয়েছিলেন। ভারতের চিকিৎসকরা দুঃখজনক খবর দিয়েছিলেন যে- সাইফুলের ডান চোখ অনিবার্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সাইফুল এখনও তার মা এবং বান্ধবীকে এ কথা জানাননি।

বিএনপির স্বাস্থ্য সচিব ডা. রফিক জানিয়েছেন, ২০১২ সালে সিরাজগঞ্জের এক বিএনপি নেতা দুই চোখ হারান। এরপর থেকে দেশে ৫০-৬৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। চিকিৎসার অভাবে আক্রান্তদের যথাযথ সাহায্য মিলছে না। আরও দুঃখজনক হলো যে গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীদের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশের চোখের দৃষ্টি শেষ পর্যন্ত চলে গেছে। সমস্যা আরও জটিল হয়েছে দেশে দক্ষ রেটিনা সার্জনের অভাবের কারণে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা তখন আওয়ামী লীগ সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেনি। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করে বিএনপি নেতাকর্মীরাই তাদের ওপর হামলা করেছে।

আপন দেশ/এমবি
 

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়