Apan Desh | আপন দেশ

ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে এ ছেলেগুলোকে নিষিদ্ধ করবো না: সারজিস আলম

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ২২:২৮, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ২২:২৯, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে এ ছেলেগুলোকে নিষিদ্ধ করবো না: সারজিস আলম

সারজিস আলম: ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী নন তিনি। 

সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাতে ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনের পটভূমিতে এ কথা বলেন।

সারজিস লিখেন, ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত হলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ছাত্রলীগের কার্যক্রমে বাধ্য হয়ে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীকে। যারা আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ নয়।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় এ ছাত্রদের সাহসী অংশগ্রহণের কারণে অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হতে পেরেছিলেন। আন্দোলন সফল না হলে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হতেন।

এই সমন্বয়ক লিখেছেন, এবার আরেক প্রসঙ্গে আসি। হলের যে ছাত্রলীগের কমিটি হতো এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকতো কিছু কারণে-

যেমন-
১. ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়।
২.যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়।
৩. অন্যরা যেন তার ওপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয়।

বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করতো। অনেকে ভিন্নমতের লোকদের ওপর অত্যাচার করতো। অনেকে ক্যান্ডিডেট হতো, অনেকে একটু ফাপর নিয়ে চলতো।

সারজিস লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক এ প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০ শতাংশ স্টুডেন্ট। তারা যেমন পোস্টেড ছিল, তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেইস ছিল। তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই আদার্স নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে বের হয়ে আসতে পেরেছিল। এ কারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি। এ পোস্টেড ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও এক হয়ে বের হয়ে আসার সাহস করতে পারতো না। ওই গার্টস আর বোল্ডনেস এ ছেলেগুলাই শো করতে পারে ৷

তিনি আরও লিখেছেন, হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এ পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিল। আন্দোলনটা প্রাথমিকভাবে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেয়া যায়নি। ১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন না আসলে ৫ আগস্ট কখনো সম্ভব হতো কি না সে বিষয়ে ঢের সন্দেহ আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে হলের এ পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলবো কি না। উত্তর: ‘ফেলবো না’। যারা ১ জুলাই থেকে আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সত্য এটাই যে, এ আন্দোলন সফল না হলে এ ছেলেগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো। বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেয়া হতো। যোগ করেন সারজিস আলম।

এ সমন্বয়ক লিখেছেন, যে সিস্টেমের কারণে এদের বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট নিতে হয়েছে সে সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের সবাইকে দায়ী হতে হবে। কারণ আপনারা চুপ ছিলেন। হলে, ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাধা দেননি। ওরা যদি সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয় তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন। বরং যখনই সুযোগ হয়েছে ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। আর তখনও আপনি নীরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন।

এই ৮০ শতাংশ ছেলের কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তদন্তসাপেক্ষে তার শাস্তি হোক, কেউ যদি পরে কোনো অন্যায়ে জড়িত হয় তবে তদন্তসাপেক্ষে তারও শাস্তি হোক। কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেফতার হবে এটা কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না।

শেষ তিনি আরও লেখেন, যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সব বাধা উপেক্ষা করে আমার সঙ্গে জীবনবাজি রেখে রাজপথে নেমেছে তারা আমার ভাই। ২৪ এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা। আমি তাদের পক্ষে থাকবো। সত্য সত্যই। কে কি বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়