Apan Desh | আপন দেশ

ফের অকেজো পরিবহণের দখলে সড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ৪ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৬:৪৭, ৪ নভেম্বর ২০২৪

ফের অকেজো পরিবহণের দখলে সড়ক

রাজধানীর গুলিস্থানের গোলাপ শাহ মাজার (ওপরে) ও শনিআখড়া থেকে তোলা ছবি- আপন দেশ

আবারও ফিটনেসবিহীন অকেজো যানবাহনে ভরে গেছে রাজধানীর সড়কপথ। চলার যোগ্য নয় তারপরেও চলছে এসব পরিবহন। ফলে বাড়ছে বায়ুদূষণ। সৃষ্টি হচ্ছে কালো ধোঁয়া। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানবস্বাস্থ্য। সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকাই এর অন্যতম কারণ। যার সুবিধা নিচ্ছেন অসাধু পরিবহন মালিকরা। বায়ু ‍দূষণরোধ ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। আর এর প্রভাব পড়ে সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন সংস্থায়। এসময় ট্রাফিক পুলিশ মাঠে না থাকায় সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে যায়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর কর্মবিরতি ও হামলার ভয় কাটিয়ে আবারও মাঠে ফেরে পুলিশ। কাজে ফেরেন ট্রাফিক সদস্যরা। তবে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

দেখা গেছে, কোন বাসের জানালার কাঁচ ভাঙ্গা, কোনটির হেডলাইট, সিগনাল লাইট নেই। আবার কোনো বাসের সিট করছে নড়বড়, খুলে পড়ছে গাড়ির বডির বিভিন্ন অংশ। কোনোটির রং চটেছে বহু আগেই।

পুলিশ বলছে, রাজধানীতে ফিটনেস ছাড়া গাড়ির সংখ্যা এখন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এরপরও এসব বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন তারা। তবে ফিটনেস সনদের মেয়াদ থাকায় আইনি ব্যবস্থা নিতে খানিকটা হিমশিম খেতে হয় তাদের। অথচ মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গত হলে তা জরিমানাসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

পরিবহন চালকরা জানান, অকেজো গাড়ি মেরামত করে ফিটনেস সনদ নেয়া হয়। এরপর যাত্রী নেয়ার তাগিদে মাস তিনেক না যেতেই গাড়ির দশা বেহাল।

বিআরটিএ বলছে, ফিটনেস সনদ দেয়ার পরও রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ফিটনেসবিহীন গাড়ী ডাম্পিং করা হয়। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে নেয়া হয় আইনি ব্যবস্থা।

আরও পড়ুন <> ঢাকার বায়ুমান আজও অস্বাস্থ্যকর

২০২৪ সালের এপ্রিলে শেখ হাসিনার সরকার বায়ু দূষণ প্রতিরোধে ৭৩ হাজার বাস-ট্রাক প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়। ঢাকাসহ সারা দেশে ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়।

তালিকা অনুসারে, সারা দেশে ২৫ বছরের বেশি পুরাতন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকার রয়েছে মোট ৩৭ হাজার ৮৮৬টি। ২০ বছরের বেশি ও ২৫ বছরের কম বয়সী যানবাহনের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৭৮২টি।

কিন্তু এর কোন প্রতিফলন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিতে দেখা যাচ্ছে না। তাই বায়ুদূষণ প্রতিরোধে এসব গাড়ি সরানোর ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার আহবান ভুক্তভোগীদের। 

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ যানবাহনের কালো ধোঁয়া। কোন অবস্থাতেই এ ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং কালো ধোঁয়া নির্গমণকারি যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রা।  ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকে যে কালো ধোঁয়া বের হয় তার সুক্ষ্ম কণা বাতাসে মিশে তৈরি করছে কালো কার্বণ, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

তারা আরও বলেন, বায়ুদূষণের জন্য এখন বেশিরভাগ দায়ি তরল জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি হওয়া এ ধোঁয়া। আর এ  তালিকায় আছে বাস, লেগুনা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস। বিশেষ করে, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থেকেই বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। তবে বিআরটিএ-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির সংখ্যা চার লাখ ৮১ হাজারের বেশি। যেগুলো থেকে কালো বিষাক্ত ধোঁয়া বের হয়।

আরও পড়ুন<<>> অস্বাস্থ্যকর ঢাকার বাতাস

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ভাংচুর হয়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল লাইট, ট্রাফিকের বসার জন্য তৈরি বক্সগুলো। এখনও তা মেরামত বা নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়নি। ফলে এসব এলাকায় ট্রাফিকের কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও দেখা পাওয়া যায়নি। ট্রাফিক সার্জেন্ট, পুলিশ সদস্যদের প্রতিটি মোড়েই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তবে সংখ্যায় কম।

দায়িত্বপালনকারী ট্রাফিক পুলিশের দাবি, এখনও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হচ্ছে। তারা সড়কে সক্রিয় থাকলেও আগের মতো কাজে এখনও ফিরতে পারেননি। ফলে এ সুযোগটা নিচ্ছে অনেকে। বিশেষ করে মোড়ে মোড়ে অটোচালকদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ট্রাফিক সদস্য।

রাজধানীর ধানমণ্ডি  শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজার, ফার্মগেটসহ কিছু পয়েন্ট দেখা যায়-নির্দিষ্ট  সিগন্যাল না মেনে অনেক যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবেশমুখ বন্ধ  করে মোড়ে মোড়ে রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও ছোট ছোট যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

রাজধানী পল্টনে ট্রাফিক সিগন্যালে দায়িত্বরত সার্জেন্ট সাইফুল ইসলাম  জানান, এখনও আমরা আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। চালকরা অনিয়ম করলে কিছু বলতে গেলে আমাদের উপর চড়াও হচ্ছে। ফলে আমরা চাইলেও তখন কিছু বলতে পারছি না।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়