Apan Desh | আপন দেশ

শেখ মুজিব কোথায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, তাজউদ্দীনের সন্তানদের প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ৯ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ২২:৪৬, ৯ নভেম্বর ২০২৪

শেখ মুজিব কোথায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, তাজউদ্দীনের সন্তানদের প্রশ্ন

‘শতাব্দীর কন্ঠস্বর তাজউদ্দীন আহমদ মেয়ের চোখে, ছেলের চোখে’ শিরোনামের আলোচনা সভা।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমেদ ও ছেলে সোহেল তাজ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কিছু অজানা কথা তুলে ধরেছেন।

শারমিন আহমেদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা জাতির কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার বাবাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের নির্দেশনার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু মানা করলেন তাহলে তিনি কোথায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন?

তিনি বলেন, ২৫ মার্চ যখন ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আলোচনা করছিলেন। সে-সময় মা ( জোহুরা তাজউদ্দিন) বাবাকে জিজ্ঞাসা করেন, দেশের পরিস্থিতি কী হবে? তখন বাবা বলেন, আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবো।

শারমিন আরও বলেন, সবাই বঙ্গবন্ধুর উপর নির্ভর করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি দিলেন না। মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনগণের সংগ্রাম। তবে ইতিহাসে তা এক ব্যক্তির (বঙ্গবন্ধু) যুদ্ধ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদকে নির্দেশনার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু মানা করলেন তাহলে তিনি কোথায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন।

‘শতাব্দীর কণ্ঠস্বর: তাজউদ্দীন আহমদ মেয়ের চোখে, ছেলের চোখে’ শিরোনামের আলোচনা সভায় তাজউদ্দীনের কন্যা শারমিন আহমদ এসব কথা বলেছেন।

শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে বাংলা অ্যাকাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তাজউদ্দীন আহমদ নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে। অধ্যাপক আহমেদ মোস্তফা কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ) ও মেয়ে শারমিন আহমদ বক্তব্য দেন।

শারমিন আহমেদ বলেন, আমার আব্বু তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন মানবিক ও ক্ষুরধার প্রতিভার অধিকারী। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তিনি আগেই বুঝে গিয়েছিলেন ইন্দিরা তাকে কী প্রশ্ন করবেন। আব্বু ছিলেন উদার, গণতান্ত্রিক, মানবতাবাদী।

তিনি আরও বলেন, ছয় দফা আন্দোলনের সময় কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী আব্বুর সমালোচনা করেছিলো। তখন তিনি তাদের বলেছিলেন, 'ইসলামের কোথায় মানুষের ও ন্যায়ের বিরোধিতা আছে, সেটা দেখাও।' আব্বু বিশ্বাস করতেন, ধর্ম মানুষের মুক্তির উপায়। তিনি বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংকিংয়ের উদ্যোক্তা ছিলেন।

শারমিন বলেন, বাদশা ফয়সল আব্বুর প্রতি রাগ দেখালে আব্বু কোরআন থেকে তাকে বোঝালে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ আব্বু কোরআনে হাফেজ ছিলেন।

তাজউদ্দিন কন্যা বলেন, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হক তখন নামকরা প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি ছিলেন মুজিব কাকুর ঘনিষ্ঠ। তিনি ট্রান্সমিটার নিয়ে এলেও মুজিব কাকুর কোনো খবর ছিল না। ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম ট্রান্সমিটার নিয়ে প্রশ্ন করলে তাকে কিছুই বলেননি। নুরুল হক বলেছিলেন, মুজিব ছাড়া কাউকে কিছু বলা যাবে না। কিন্তু মুজিব তার কথা রাখেননি।

ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হক প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবের উচিত ছিল ট্রান্সমিটার ও গোপন তথ্যের বিষয়ে নুরুল হকের সঙ্গে আলোচনা করা। কিন্তু মুজিব ছিলেন লাপাত্তা। স্বাধীনতার বিষয়ে তিনি উদাসীন ছিলেন। ট্রান্সমিটার না পেয়ে পাক সেনারা নুরুল হককে তুলে নেয়। এরপর তিনি নিখোঁজ হন। ইতিহাসে এমন ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হকদের নাম নেই।

শেখ মুজিবের সই প্রসঙ্গে তাজউদ্দিন কন্যা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগেই এক সকালে আমার আব্বা (তাজউদ্দীন) আম্মাকে বলেছিলেন, আমি মুজিব ভাইয়ের সাইন নিতে যাচ্ছি। কিন্তু তিনি পরে হতাশ হয়ে ফিরে এসে বলেছিলেন, মুজিব ভাই আমাদের ২৩ বছরের সংগ্রাম মাটি করে দিলেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণায় সাইন করলেন না।

তিনি বলেন, পাকিস্তান ভাঙার জন্য সবাই তাজউদ্দীন আহমদকে দায়ী করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার কৃতিত্ব এককভাবে বঙ্গবন্ধুর দিকে চলে গেছে। ইতিহাস থেকে আমরা ছিটকে পড়েছি।

শারমিন আহমেদ বলেন, আব্বা ছিলেন বইপ্রেমী। প্রকৃতির ও বইয়ের প্রতি তার ছিল অগাধ প্রেম। তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই গাছ লাগাতেন।

বাবাকে নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বলেন, আব্বার একটা গুণ ছিলো তিনি সবসময় ভালো কিছু শেখার চেষ্টা করতেন। সেটা  প্রয়োজন হলে শত্রুর কাছ থেকেও। নীতি ও আদর্শ যাই থাকুক তিনি সবার কাছ থেকে ভালো কিছু নিতে চাইতেন।

তাজউদ্দিনের ভূমিকার কথা তুলেধরে সোহেল তাজ বলেন, ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে আব্বা সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তার মতো নেতা আর কেউ ছিলেন না। তার নেতৃত্বের অনেক গুণ ছিল বিশেষ করে মানুষকে কাছে টানা। কানেকশান তৈরি করার দক্ষতা।

স্বাধীনতার ডাক নিয়ে সাবেক এ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেননি। তবে এটা ছিল এক ধরনের উদ্ধুদ্ধকরণ। ৭ থেকে ২৪ মার্চ নেগোসিয়েশন চলছিল। বাবা ৩২ নাম্বারে গিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা রেকর্ড হয়নি।

সোহেল তাজ বলেন, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সবাই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল তুমি কেন যাওনি তখন তিনি বলেছিলেন আমি পাকিস্তানকে বাঁচানোর জন্যই আন্ডারগ্রাউন্ডে যাইনি।

আপন দেশ/এমবি/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়