আনোয়ার আলদীন
সিলেটের কানাইঘাটের ছোট্ট শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন (৬) হত্যায় পুরো দেশ শোকে ভারাক্রান্ত। ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ দিন পর আজ তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিশু মুনতাহার হত্যা কাণ্ডে পুলিশ ও এলাকাবাসীর চেষ্টায় একের পর এক ঘটনা প্রকাশ পায়।
রোববার (১০ নভেম্বর) নিখোঁজ শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের মরদেহ দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। বিলাপ করছেন বাবা-মা। ফুটফুটে ওই শিশুটি হত্যায় শুধু স্বজনরা নয়, কাঁদছে দেশবাসীও।
জানা যায়, গেলো ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে মুনতাহা। এরপর পাশের বাড়িতে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু এরপর আর বাড়ি ফেরেনি ছোট্ট মুনতাহা। প্রিয়মুখটির সন্ধান পেতে স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও পায়নি। অবশেষে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তার বাবা। শিশুটির সন্ধান পেতে জোর তৎপরতা চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। রোববার ভোর ৪টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত শিশু মুনতাহা কানাইঘাট সদর উপজেলার বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, খাস জমিতে বসবাস করেন ভিক্ষুক আলিফজান। প্রতিবেশী শিশু মুনতাহার পরিবারের সঙ্গে সহানুভূতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো আলিফজানের পরিবারের। মুনতাহাকে পড়াতো আলিফজানের মেয়ে মারজিয়া। গত ৩ নভেম্বর শিশু মুনতাহা নিখোঁজের পর বিভিন্ন নম্বর থেকে পরিবারের কাছে চাওয়া হয় টাকা। ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে আসে হুমকিও। ঘটনাটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত আলিফজানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগও করেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
আরও জানা যায়, রোববার রাতে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশু মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়াকে থানায় নেয় পুলিশ। এ সময় তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে মার্জিয়ার বাড়িতে মুনতাহার সন্ধানে তল্লাশি চালান স্থানীয়রা। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে তল্লাশি চালানোর এক পর্যায়ে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন। এ সময় তাকে আটকাতে চাইলে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা গিয়ে কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান। পরে মার্জিয়ার মাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ৩ নভেম্বর মুনতাহার বাবা তার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে থানায় জানান। পরে থানায় একটি জিডি করেন তিনি। পরে তদন্তের সূত্র ধরে মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিকা শামিমা বেগম মারজিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ৩ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে তাদের ঘরে শিশু মুনতাহাকে গলা টিপে ও বস্তাচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ সুপার মাহবুব আলম বলেন, আমরা এ ঘটনায় যাদের ধরতে পেরেছি তার বাইরেও আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করে বের করে আনার চেষ্টা করছি। আমাদের বিভিন্ন ইউনিট এ অনুসন্ধানে একযোগে কাজ করছে।
জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর বিকেলে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল গ্রামের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের নিজ বাড়ির উঠান থেকে নিখোঁজ হয়েছিলো মুনতাহা।
অবশেষে রোববার ভোর ৪টার দিকে বাড়ির পাশের ডোবায় গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় মুনতাহার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রতিবেশী আলিফজানসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।